মহাবিশ্বে প্রাণের খোঁজ: কবে মিলবে ভিনগ্রহবাসীর দেখা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৫৫

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ পাওয়া হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। প্রতীকী ছবি
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কৌতুহল এ মহাবিশ্বে আমাদের গ্রহের পাশাপাশি আর কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না? তবে এ প্রশ্ন এখন আর কোনো বিজ্ঞানী করেন না। বরং তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কবে সেই প্রাণের খোঁজ মিলবে?
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ পাওয়া হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ আশাবাদী যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ত দূরের কোন গ্রহে জীবনের সন্ধান পাওয়া যাবে।
স্কটল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্যাথরিন থেইম্যানস বলেন, “অসীম নক্ষত্র এবং গ্রহের একটি মহাবিশ্বে আমরা বসবাস করি। সেখানে অবশ্যই আমরাই শুধু একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী হতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই মহাবিশ্বে আমরাই একা আছি কিনা, সে প্রশ্নে উত্তর খোঁজার মতো প্রযুক্তি এবং ক্ষমতা এখন আমাদের আছে।’’
মহাকাশের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যে টেলিস্কোপগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এখন দূরের নক্ষত্রসমূহে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারে। পৃথিবীর মতো জীবিত প্রাণী দ্বারা উৎপাদিত হয়, এমন রাসায়নিকের সন্ধানও করতে পারে।
এ মাসের শুরুর দিকে সেখানে বড় ধরনের একটি আবিষ্কার হয়, ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কে২-১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাস শনাক্ত করা হয়, যা পৃথিবীতে সামুদ্রিক জীব দ্বারা উৎপাদন হয়ে থাকে।
এই গ্রহটিকে বিজ্ঞানীরা ডাকেন গোল্ডিলক্স জোন নামে। গ্রহটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, সেটি থেকে গ্রহটির দূরত্ব এমন যা খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠাণ্ডা হয় না। যা ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার সমান। সেখানে তরল পানি থাকার জন্যও সঠিক তাপমাত্রা রয়েছে, যা জীবন থাকার জন্য অপরিহার্য।
বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষজ্ঞ দল আশা করছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই তারা জানতে পারবেন যে, আগ্রহ উদ্দীপক এসব ইঙ্গিত সেখানে আসলেই জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করছে কিনা।
যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নিক্স মধুসূদন বলেছেন, এসব ইঙ্গিত যদি সত্যি বলে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তা ‘জীবনের সন্ধান সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনাকে আমূল বদলে দেবে।
এদিকে, নাসা ২০৩০ সাল নাগাদ হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডব্লিউও) বা বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার একটি অনুসন্ধান কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে।
সেখানে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল চিহ্নিত করতে এবং পর্যালোচনা করতে সক্ষম হবে।
এই দশকের শেষের দিকে আসছে বিশাল বড় টেলিস্কোপ (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ-ইএলটি)।
চিলির মরুভূমি থেকে সেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
অন্য টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় সেটিতে বড় আকারের আয়না থাকবে, ফলে সেটি গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল আরও ভালোভাবে দেখতে পারবে।
এগুলো এতই অবিশ্বাস্য শক্তিশালী যে, শত শত আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে আলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ শনাক্ত করতে পারে।
আমাদের সাথে কি ভিনগ্রহের প্রাণীদের যোগাযোগ হতে পারে?
অনেকে এই ধারণাকে সায়েন্স ফিকশন বলে মনে করলেও ভিনগ্রহ থেকে রেডিও সিগন্যাল আসছে কিনা, তা নিয়ে বহু বছর ধরেই গবেষণা চলছে। সার্চ ফর এক্সটা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (SETI) ছাড়াও আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা করছে।
যদিও বিশাল মহাবিশ্ব জুড়ে এলোমেলোভাবে চালানো এসব অনুসন্ধানে এখনো কোন সম্মিলিত ফলাফল আসেনি, কিন্তু অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত হলে তারা তখন সেদিকে অনুসন্ধানের জন্য গুরুত্ব দিতে পারবে।
ত্রিশ বছর আগেও অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে, এমন কোন গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণ ছিল না। কিন্তু এখন এরকম পাঁচ হাজারের বেশি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নিয়ে গবেষণা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এ থেকে আশা করা যেতেই পারে অচীরে, হয়ত আমাদের জীবদ্দশায়, ভিনগ্রহের প্রাণীদেরকে খুঁজে পাবে মানুষ। আবার এমন সম্ভব যে ভিনগ্রহের প্রাণীরাই হয়ত খুঁজে পাবে মানুষকে।