Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সাইবার জগতের নতুন ফাঁদ ডিপফেক

Icon

রবিউল কমল

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫৩

সাইবার জগতের নতুন ফাঁদ ডিপফেক

ছবি: ইন্টারনেট

বর্তমানে খুব পরিচিত একটি শব্দ হয়ে উঠেছে ডিপফেক। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় ভুয়া ভিডিও ও ছবি বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক তারকা এই সাইবার ফাঁদের শিকার হয়েছেন। এই তালিকায় আছেন বলিউড অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা, আলিয়া ভাট, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া থেকে শুরু করে সংগীত তারকা টেলর সুইফট। তাই প্রযুক্তির এই অপব্যবহার নিয়ে সবার মাঝে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। এই ভীতির কারণ হচ্ছে ডিপফেক ভিডিওতে একজন ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করে এবং কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়। ফলে অনেকে বুঝতে পারেন না ভিডিওটি আসল নাকি নকল। এতে বিভ্রান্তি তৈরির পাশাপাশি প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে।

সম্প্রতি মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ডিপফেক ফিশিং নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। অবশ্য সাইবার প্রতারণার জগতে ফিশিং কয়েক দশক ধরে পরিচিত একটি মাধ্যম। ফোর্বস বলছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হ্যাক বা অনুপ্রবেশের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি এই ফিশিং। ফিশাররা প্রযুক্তির বিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিশিং আবার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তাই কিছু বিশেষজ্ঞ এআই প্রযুক্তিকে সাইবার অপরাধের সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ডিপফেক ফিশিং কী?
ডিপফেক হলো সিনথেটিক ছবি, ভিডিও বা অডিও যা ডিপ লার্নিং ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। তাই এর নাম ‘ডিপফেক’। এআই ব্যবহার করে ফটোশপ বা মোবাইল অ্যাপ দিয়ে ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে ছবি ও ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করা যায়। অল্প বয়সী মানুষকে বেশি বয়সী দেখানো, ভয়েস নকল বা ক্লোন করা, সিনেমার দৃশ্য ব্যবহার কিংবা অশ্লীল ভিডিওতে কোনো তারকার মুখের অবয়ব ব্যবহার করা যায়। যে ভিডিওটি দেখে যে কারও মনে হবে, ভিডিওটি ওই তারকার। কিন্তু ডিপফেক ফিশিং তুলনামূলকভাবে নতুন একটি ফিশিং কৌশল। যেখানে সাইবার আক্রমণকারীরা সামাজিক মাধ্যম ও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাউকে আক্রমণ করে বা লক্ষ্যবস্তু করে।

কীভাবে কাজ করে?
কাউকে সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, ডিপফেক ফিশিংয়েও একই নীতি অনুসরণ করা হয়। এ ধরনের ভিডিও মানুষকে বিভ্রান্ত বা ম্যানিপুলেট করে। তাদের বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেয়। সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন উপায়ে ফিশিং হামলার জন্য শুধু ভিডিও নয় আরও বিভিন্নভাবে ডিপফেককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন

ইমেইল বা মেসেজ
বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর বিজনেস ইমেইল কম্প্রোমাইজ (বিইসি) আক্রমণ বা সিইও জালিয়াতির শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা হারাচ্ছে। ডিপফেক এই বিইসি আক্রমণকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে। কারণ আক্রমণকারীরা ইমেইল ও পরিচয় বিশ্বাসযোগ্য করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। যেমন-তারা সিইওদের নকল লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি করে থাকে। তারপর কর্মচারীদের প্রলুব্ধ করতে সেই নকল প্রোফাইল থেকে মেসেজ বা ইমেইল পাঠায়।

ভিডিও কল
সাইবার হামলাকারী জুম কলের মাধ্যমে ভিডিও ডিপফেক ব্যবহার করে গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এমনকি গোপনীয় লেনদেনে রাজি করাতে পারে। কারণ কলের ওপাশে যে ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার করা হচ্ছে তা এপাশের মানুষটি বুঝে উঠতে নাও পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, চীনে একজন স্ক্যামার ছদ্মবেশ ধারণ করতে ফেস-সোয়াপিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। পরে তিনি ভিডিওকলে এক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ লাখ ২২ হাজার ডলার হাতিয়ে নেন।

ভয়েস মেসেজ
আজকাল এআই দিয়ে যে কারও ভয়েস ক্লোন করা অত্যন্ত সহজ। এজন্য তাদের প্রয়োজন হলো মাত্র তিন সেকেন্ডের ক্লিপ। এই ডিপফেক ভয়েস মেসেজ ছড়িয়ে দিয়ে বা সরাসরি কথোপকথনে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেন হ্যাকাররা। এ ধরনের ডিপফেক বাস্তব ও নকলকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন করে তুলেছে। ফোর্বসের আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ডিপফেক ভয়েস জালিয়াতির শিকার হয়েছে।

ডিপফেক ফিশিং নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন, কারণ প্রথমত এটি দ্রুত বর্ধনশীল হুমকি হয়ে উঠেছে। ডিপফেক প্রযুক্তি এআইয়ের কারণে অনেকটা বাস্তবের মতো হয়ে উঠেছে। তাই শুরুতে মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে। তথ্য অনুযায়ী, বিস্ময়কর হলেও ২০২৩ সালে ডিপফেক ফিশিং ও জালিয়াতির ঘটনা তিন হাজার শতাংশ বেড়েছে।

দ্বিতীয়ত আক্রমণকারীরা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে ডিপফেক ব্যবহার করতে পারে। তারা ওই ব্যক্তির নির্দিষ্ট আগ্রহ, শখ ও বন্ধুদের নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে নিশানা ঠিক করতে পারে। খুব সহজেই লক্ষ্যবস্তুর দুর্বলতা কাজে লাগাতে পারে।

তৃতীয়ত এটি শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কারণ এআই যে কারও লেখার স্টাইল নকল করতে পারে, প্রায় নিখুঁত নির্ভুলভাবে ভয়েস ক্লোন করতে পারে, এআই হুবহু মানুষের মুখের মতো ফেস তৈরি করতে পারে, যা অনেক সময় মানুষের মুখ থেকে পৃথক করা যায় না। এসব কারণে ডিপফেক ফিশিং আক্রমণ শনাক্ত করা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে।

ডিপফেক ভিডিও চেনার উপায়
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুল ব্যবহার করে তৈরি নকল ভিডিও চেনার কিছু উপায় রয়েছে। কোনো ভিডিও নিয়ে সন্দেহ হলে সেখানে থাকা মানুষের নাক, কান, পা ও হাতের গড়ন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মুখের সঙ্গে ঠোঁট নাড়ানোর অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেলেই বুঝতে হবে যে ভিডিওটি নকল। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ভিডিও নিখুঁতভাবে তৈরি করতে পারে না। এ ছাড়া কণ্ঠস্বর ওঠানামা করলেও বুঝতে হবে, ভিডিওটি নকল বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫