Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বাতাস থেকে সুপেয় পানি

Icon

মাহাবুবা আখতার

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১৭:২০

বাতাস থেকে সুপেয় পানি

মরোক্কোর আইত বামরানের ফগ ক্যাচার। ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বর্তমান বিশ্বে পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে দুই জনের সুপেয় পানির কোনো নিরাপদ উৎস নেই। ফলে সুপেয় পানির টেকসই বিকল্প নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ, বিশুদ্ধ সুপেয় পানির বিকল্প উৎস বের করতে। তারই অংশ হিসেবে তারা বাতাস বা কুয়াশা থেকে খাবার পানি তৈরির নানাবিধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাতে সফলও হচ্ছেন। 

জানলে অবাক হতে হয়, বাতাস থেকে কুয়াশা বা শিশিরের পানি সংগ্রহ আসলে একটি প্রাচীন রীতি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ইসরায়েলে ঘনীভবনের মাধ্যমে বাতাসের আর্দ্রতা থেকে পানি সংগ্রহের জন্য গাছপালা এবং লতার চারপাশে তৈরি করা নিম্ন-বৃত্তাকার দেয়ালের প্রমাণ পেয়েছেন। দক্ষিণ আমেরিকার আতাকামা মরুভূমিতে কিংবা মিশরে পাওয়া পাথরখণ্ড দিয়ে বিশেষভাবে নির্মিত জলাধারেও ঘনীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুয়াশা বা শিশির থেকে আর্দ্রতা বা পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রমাণ মিলেছে।

মরোক্কোর আইত বামরানের ফগ ক্যাচার

কিছু মরু অঞ্চলে, যেখানে খুব কম বৃষ্টি হয়, সেখানে কুয়াশা এবং শিশির বিশুদ্ধ পানির একটি চমৎকার উৎস। এমনই একটি জায়গা মরোক্কোর ‘আইত বামরানে’ অঞ্চল। এখানে খুব কম বৃষ্টি হয়। কিন্তু সারা বছর বেশ কুয়াশা পড়ে। আইত বামরানের স্থানীয় বাসিন্দারা ওই কুয়াশা বা শিশির সংগ্রহের জন্য মাকড়শার জালের মতো তারের জালিকা দিয়ে বিশাল ‘ফগ ক্যাচার’ কাঠামো নির্মাণ করে। এসব ফগ ক্যাচার কাঠামোতে স্থাপিত জালে যখন শিশিরবিন্দু জমা হয় তখন এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘনীভূত হয়ে বড় বড় ড্রপলেটে পরিণত হয়। এরপর এগুলো ভারি হয়ে ঝরে পড়ে ও একাধিক নল বা পাইপের ভেতর দিয়ে মাটির নিচে একটি বড় জলাধারে জমা হয়। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি জমা হয়। যা একটি গ্রামের বাসিন্দাদের সারা দিনের ব্যবহৃত পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। 

স্প্যানিশ প্রকৌশলীর উদ্ভাবিত মেশিন

শুষ্ক এলাকা এবং শরণার্থী শিবিরে খাবার পানি জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে স্প্যানিশ প্রকৌশলী এনরিখ ভেইগার উদ্ভাবন করেছেন বাতাস থেকে সুপেয় পানি তৈরির একটা যন্ত্র। তবে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রের সমস্যা হচ্ছে বাতাসের আর্দ্র কণা যতক্ষণ না পর্যন্ত হিমায়িত হয়ে পানিতে রূপান্তর হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা লাগে। সুবিধা হচ্ছে, ভেইগারের উদ্ভাবিত মেশিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশের আর্দ্রতাও সংগ্রহ করতে পারে। তার তৈরি মেশিন নামিবিয়ায় এবং লেবাননের কিছু শরণার্থী শিবিরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওলকচু ও সেলুলোজের জেল

বছর দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক ধরনের আঠালো মিশ্রণ বা জেল উদ্ভাবন করেন, যা সহজেই বাতাসের জলীয় কণাকে ধারণ করে পানি উৎপন্ন করতে পারে। তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি খুবই স্বল্প খরচের।

উদ্ভাবিত থকথকে আঠালো ফিল্মটি মূলত দুইটি উপাদান দ্বারা তৈরি। প্রথমটি ওলকচু আর দ্বিতীয় সেলুলোজ। এই দুই উপাদানকে একত্রে মিশ্রণ করে একটা জেল তৈরি করা হয়, যা বাতাস থেকে পানি শোষণ করে পরবে প্রয়োজন অনুযায়ী নিঃসরণ করার সক্ষমতা রাখে। আর এ পুরো প্রক্রিয়ায় শক্তি খুব কম প্রয়োজন হয়। 

পরীক্ষায় দেখা গেছে, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্ভাবিত জেলটি একটি উৎকৃষ্ট পানি নিষ্কাষক। প্রতি কেজি জেল ৩০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় বাতাস থেকে এক দিনে প্রায় ১৩ লিটার পানি সংগ্রহ করতে সক্ষম। 

ভারতের স্টার্টআপ উরাভু ল্যাবস

ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান উরাভু ল্যাবসও বাতাসের আর্দ্রতা থেকে পানি শোষণ করার একটি ডিভাইস তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারা কিছুটা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণের জন্য ব্রাইন নামে একটি লবণাক্ত পানির দ্রবণ ব্যবহার করেছে। বাতাস যখন ব্রাইনের ওপর দিয়ে যায়, তখন এই দ্রবণ বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে। তারপর ব্রাইনটি সৌরশক্তির সাহায্যে গরম করা হয় এবং যে জলীয়বাষ্প তৈরি হয়, তা ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়।

উরাভু ল্যাবস বেঙ্গালুরুর নিজস্ব ফ্যাসিলিটি থেকে বিভিন্ন ক্যাফে, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বোতলজাত পানি সরবরাহ করে। প্রতি লিটার পানি উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ৫-৬ টাকা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫