Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাভেদ ইউটিউবের উদ্ভাবক

Icon

ফারিহা জান্নাত কুয়াশা

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ২০:০৬

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাভেদ ইউটিউবের উদ্ভাবক

জাভেদ করিম। ছবি: সংগৃহীত

ইউটিউব, এ যেন আলাদিনের এক ডিজিটাল দৈত্য। প্রদীপ ঘষলেই দৈত্য বেরিয়ে এসে বলবে, বলুন কী দেখতে চান? বিনোদন, খেলা, প্রযুক্তি, শিক্ষা, সংবাদ, সাজসজ্জা, রান্না, ভ্রমণ থেকে শুরু করে কী নেই এখন ইউটিউবে? কিন্তু আমরা কি জানি, জনপ্রিয় এই অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন একজন বাংলাদেশির নাম? ইউটিউব যাত্রা শুরু করেছিল ২০০৫ সালে। গুগলের মালিকানাধীন হলেও এর মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন জাভেদ করিম, চ্যাড হারলি এবং স্টিভ চেন। যার মধ্যে সহপ্রতিষ্ঠাতা জাভেদ করিম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। 

২০০৫ সালের ২৪ এপ্রিল শখের বশেই ইউটিউবের প্রথম ভিডিও আপলোড করেছিলেন ২৫ বছর বয়সের জাভেদ। ভিডিওটি ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো চিড়িয়াখানায় ধারণ করেছিলেন তিনি। ১৯ সেকেন্ডের এই ভ্ল ভিডিওতে তার পেছনে থাকা দুটি হাতির বর্ণনা দিতে দেখা যায় তাকে। ‘মি অ্যাট দ্য জু’ শীর্ষক সেই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন হাতির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এখানকার হাতিগুলোর বিশেষত্ব হলো, তাদের শুঁড় অনেক লম্বা, ব্যাপারটা মজার। এটাই বলার ছিল আমার।’

জাভেদ কি সেদিন ভেবেছিলেন কী বিশাল এক ইতিহাসের জন্ম দিলেন তিনি? এই ইউটিউব একদিন সারা বিশ্বের জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে এবং বিশ্বের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিনোদনের জগৎটাই পুরোপুরি পাল্টে দেবে? 

বাংলাদেশি গবেষক বাবা নাইমুল করিম এবং জার্মান বিজ্ঞানী মা ক্রিস্টিন করিমের সন্তান জাভেদ করিমের জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৮ অক্টোবর। ২০০৪ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা করেন জাভেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দুই সহপাঠী চ্যাড হার্লি ও স্টিভ চ্যান। তারা তিনজন পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতেন অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান পে-পালে। হঠাৎ পে-পাল কোম্পানিকে কিনে নিল আরেক প্রতিষ্ঠান ই-বে। চাকরি হারিয়ে এই তিন তরুণ এবার বেকার। তবে এবার তাদের স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়ার।

তারা ইন্টারনেটে ভিডিও দেখার প্ল্যাটফর্মের ঘাটতি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। কেননা বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত-যেমন ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে যে ভয়াবহ সুনামি হয়েছিল কিংবা ২০০৪ সালে সুপার বোলের মাঝবিরতির অনুষ্ঠানে জ্যানেট জ্যাকসনের সেই বিখ্যাত ওয়্যারড্রোব ম্যালফাংশনের কোনো ভিডিও কেউ দেখতে চাইলে তখন সম্ভব ছিল না। এই ৩ উদ্যোক্তা ভাবলেন, তারা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবেন, যেখানে যে কেউ সহজেই যে কোনো ভিডিও আপলোড করতে এবং দেখতে পারবেন। আইডিয়া এলো একটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট তৈরির।

শুরু হয় ইউটিউবের যাত্রা। দুজন কম্পিউটার প্রকৌশলী ও একজন ডিজাইন এক্সপার্ট। বারবার পরিবর্তন, সংশোধন করে দাঁড়িয়ে গেল একটি ডিজাইন। তারপর জাভেদ আপলোড করেন তার প্রথম ভিডিও। যাত্রা শুরু হলেও এই প্ল্যাটফর্মটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দরকার বিশাল অর্থের। চিন্তায় পড়ে গেলেন, কোথায় পাবেন টাকা? তারা ঘুরতে থাকেন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বা বিনিয়োগকারীদের দ্বারে দ্বারে। তাদের পরিকল্পনা শুনে বিনিয়োগ করতে রাজি হয় স্কুইয়া ক্যাপিটালিস্ট।

তারপর ‘ব্রডকাস্ট ইওরসেলফ’ স্লোগান নিয়ে বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত হয় ইউটিউব। ইউটিউবের যাত্রায় প্রসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিনিয়োগ। দৈনিক ৩০ হাজার দর্শকের মাইলফলক স্পর্শ করতে ইউটিউবের সময় লেগেছে মাত্র ১ মাস। ৬ মাস পর দর্শকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ লাখে। এক বছরের মধ্যে ইউটিউবের দৈনিক ভিউ দাঁড়ায় আড়াই কোটি এবং তখন দৈনিক ২০ হাজার ভিডিও আপলোড হতো। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল ১৬৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় ইউটিউব। জাভেদ নিজ অংশে পান ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে তিনি সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক আইডিয়া শুরু করতে সাহায্য করেন।

ইউটিউব বিক্রি করে দেওয়ার পর জাভেদ করিম ইউনিভার্সিটি ভেঞ্চারস (ওয়াই ভেঞ্চারস) সহপ্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি এয়ারবিএনবি এবং রেডিটের মতো স্টার্টআপগুলোর বিনিয়োগ ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছে।   

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫