
কনটেন্ট দিয়ে অর্থ উপার্জন। ছবি: সংগৃহীত
কনটেন্ট ক্রিয়েটররা তাদের কনটেন্ট দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এমন অনেক ডিজিটাল ক্রিয়েটর আছেন যাদের আয়ের অঙ্কটা অনেক বেশি। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা কীভাবে আয় করেন। ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের আয় নিয়ে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও স্বাধীন পেশা হলো কনটেন্ট ক্রিয়েট করা। ক্রমেই এই পেশায় যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফ্যাশন ও সৌন্দর্য থেকে শুরু করে গেমিং, শিল্প, ভিডিও, সংগীত, নকশা, এমনকি খাবার- প্রায় প্রতিটি শিল্পে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ভালো করছেন। কিন্তু কীভাবে একজন কনটেন্ট ও ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়া যায়?
ডিজিটাল ক্রিয়েটর কী
যখন ফেসবুক বা টুইটারে স্ক্রল করেন তখন অনেক ভিডিও সামনে আসে। আবার ইউটিউবে কিছু সার্চ করলেই অনেক চ্যানেল কিংবা ভিডিও পেয়ে যান। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এসব ভিডিও কনটেন্ট যারা তৈরি করেন তারাই ডিজিটাল ক্রিয়েটর।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর
কনটেন্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল ক্রিয়েটর ও কনটেন্ট ক্রিয়েটররা এগুলো তৈরি করে। কিন্তু কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ডিজিটাল ক্রিয়েটরের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। ক্রিয়েটর হলো এমন ব্যক্তি যারা কোনো পণ্য, ব্র্যান্ড বা পরিষেবা নিয়ে মিডিয়া, বিশেষত ডিজিটাল মিডিয়াতে প্রচারের কনটেন্ট তৈরি করে। এখানে পার্থক্য হলো ডিজিটাল ক্রিয়েটররা তাদের কনটেন্ট ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা টিকটকের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করে। অন্যদিকে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিনের মতো অনলাইন ও অফলাইন মিডিয়ার জন্য কনটেন্ট লেখে। পার্থক্য যা-ই হোক উভয়ের কাজ হলো কনটেন্ট তৈরি করা।
বিজ্ঞাপন থেকে আয়
ব্লগার এবং ইউটিউবারদের আয়ের অন্যতম একটি উৎস বিজ্ঞাপন। গুগল এসব বিজ্ঞাপন ও অর্থ পরিশোধ করে থাকে। অবশ্য বিজ্ঞাপন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন- গুগলের বিজ্ঞাপন পেতে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটের অবশ্যই নির্দিষ্ট সংখ্যক সেশন বা ভিজিটর থাকতে হবে। আর ইউটিউবে বিজ্ঞাপন পেতে হলে অন্তত ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
পণ্য বিক্রি
ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের আয়ের আরেকটি জনপ্রিয় উৎস হলো- ই-বুক, কোর্স, ছবি এবং পণ্যদ্রব্য বিক্রি। এই প্রক্রিয়াতে অবশ্য তৃতীয় পক্ষের জন্য কনটেন্ট বানাতে হয়। বিনিময়ে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে। এটি ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের জন্য একটি লাভজনক উপায়। যেমন- আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ হন, তাহলে আপনি অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে আপনার প্রোগ্রামগুলো বিক্রি করতে পারবেন।
স্পনসরশিপ এবং ব্র্যান্ড ডিল
ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে কেউ একবার মানুষের কাছে পৌঁছতে পারলে স্পনসররা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের অর্থায়নের বিনিময়ে, সেই ক্রিয়েটর নির্দিষ্ট কোনো পণ্যের প্রচার করে থাকে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ক্রিয়েটরদের সবচেয়ে পছন্দ হলো বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব। ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। এ ছাড়া ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক থেকেও মানুষ অর্থ উপার্জন করছে। ইউটিউব ও ফেসবুকে যার ফলোয়ার বেশি এবং ভিডিও যত বেশি দেখা হবে তত বেশি অর্থ উপার্জন হবে।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর হতে হলে
আপনি যদি ডিজিটাল ক্রিয়েটর হতে চান তাহলে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এই ধাপগুলো হলো- কেমন কনটেন্ট বানাবেন তা ঠিক করা : ঠিক করতে হবে, আপনি কোন ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট বানাবেন। অবশ্যই আপনার দক্ষতাকে বিবেচনা করে বিষয় ঠিক করবেন। এরপর বিবেচনা করতে হবে, আপনি যে কনটেন্ট বানাতে চান তার চাহিদা এবং প্রতিযোগিতা কেমন।
প্রতিনিয়ত শিখতে হবে : ডিজিটাল কনটেন্ট সেক্টরটি ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। তাই এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ধরুন আপনি একটি ব্লগ প্রতিষ্ঠা করতে চান। সে ক্ষেত্রে আপনাকে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (এসইও), ওয়েবসাইটে কীভাবে ট্র্যাফিক তৈরি করতে হয় এবং অনলাইন বিপণন সম্পর্কে জানতে হবে।
পোর্টফোলিও তৈরি : আপনাকে অবশ্যই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এবং ক্লায়েন্টদের প্রতিক্রিয়া জানতে হবে। শুধু জানলেই হবে না সেগুলো অন্যদের জানাতে পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে। তাহলে অন্যরা আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। তা ছাড়া নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্যও এগুলো প্রয়োজন হবে।
নেটওয়ার্ক বাড়ানো : ভালো প্রতিক্রিয়া পেতে ফলোয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের চাহিদা আপনাকে জানতে হবে এবং সেভাবে কনটেন্ট বানাতে হবে। শুরুতে হয়তো ভালো সাড়া পাবেন না। কিন্তু আপনার ব্র্যান্ডিং বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি জনপ্রিয় হতে শুরু করবেন। আপনি যত ভালো কনটেন্ট দিতে পারবেন ততই তা ছড়াবে। ধীরে ধীরে আপনার কাজের মানও বাড়বে এবং মানুষ আপনাকে অনুসরণ করবে।
গবেষণা : ভালো কনটেন্ট বানাতে দর্শকের জন্য তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আপনি যে বিষয়ে কনটেন্ট বানাতে চান নেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তাহলে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। তারপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করে একটি মননশীল কনটেন্ট বানাতে হবে। অবশ্যই আপনার উপস্থাপনা সাবলীল হতে হবে।
ধারাবাহিকতা : আপনি যত বেশি কনটেন্ট বানাবেন তত বেশি ভিজিটর পাবেন। আপনি যদি সেরা ক্রিয়েটর হতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিতভাবে কনটেন্ট বানাতে হবে। হয়তো এটি স্বাধীন পেশা, কিন্তু তার মানে এই নয়- আপনার অনেক অবসর থাকবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে এটা আপনার জন্য কোনো বিনোদন নয়। তাই এটিকে কাজের হিসেবেই নিন। কথায় আছে, চোখের আড়াল তো মনের আড়াল। তাই আপনার ফলোয়ারদের চোখের আড়াল না হয়ে নিয়মিত কনটেন্ট দিয়ে তাদের সঙ্গে থাকুন।
শেষ কথা
অনলাইনের সহজলভ্যতা লাখ লাখ মানুষকে ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়ার এবং আর্থিকভাবে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে একজন ফ্যাশন ব্লগার, অনলাইন শিক্ষক, গেমার বা লেখকের অনলাইনে কনটেন্ট বানিয়ে অর্থ আয়ের সুযোগ আছে। তবে এজন্য মানসম্মত কনটেন্ট বানাতে হবে। আর তাতে নতুনত্ব থাকতে হবে। তাহলেই কেবল একজন সফল ডিজিটাল ক্রিয়েটর হওয়া সম্ভব।