ফিলিস্তিনের জন্য শোকসভা করায় বরখাস্ত করল মাইক্রোসফট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:০৯

মাইক্রোসফটের সদর দফতর। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি গণহত্যায় নিহত ফিলিস্তিনিদের স্মরণে মাইক্রোসফটের সদর দপ্তরে শোকসভা আয়োজন করেছিলেন দুই কর্মী। এর জেরে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফট এই সমাবেশকে 'অননুমোদিত' বলে আখ্যায়িত করেছে।
গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
আবদো মোহামেদ ও হোসাম নাসের নামের এই দুই কর্মী ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে অবস্থিত মাইক্রোসফটের সদর দপ্তরে গত বৃহস্পতিবার এই শোকসভার আয়োজন করেছিলেন। তারা ‘নো অ্যাজিউর ফর আপারথেইড’ নামে একটি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই বিক্ষোভের মূল দাবি, ইসরায়েলি সরকারের কাছে মাইক্রোসফটের ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তি অ্যাজিউর বিক্রি করা যাবে না।
আবদো মোহামেদ এপিকে জানান, ‘কর্মীরা একত্র হয়ে নিজেদের মধ্যে শোক ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু মাইক্রোসফট এই সামান্য সুবিধাটুকু দিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
নাসের বলেন, ‘এই শোকসভার উদ্দেশ্য ছিল গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে 'এই গণহত্যার প্রতি মাইক্রোসফটের নীরব সমর্থনের' বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরা।’
ইনস্টাগ্রামের পোস্টে নাসের মাইক্রোসফটকে ‘অশুভ জায়নিস্ট প্রতিষ্ঠান’ বলে উল্লেখ করেন, যারা ‘গণহত্যায় মদদ যোগাচ্ছে এবং একে আরও শক্তিশালী আকার ধারণে সহযোগিতা করছে।’
নাসেরের সামাজিক মাধ্যম পোস্ট থেকে জানা গেছে, মাইক্রোসফট এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে একাধিকবার অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনলাইনে ইহুদিবিদ্বেষী মিম ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
নাসের জানান, মাইক্রোসফট তাকে কল করার এক ঘণ্টায় আগেই ‘স্টপ অ্যান্টি সেমাইটিসম’ নামের অনলাইন গ্রুপ সামাজিক মাধ্যমে তাকে বরখাস্তের বিষয়ে পোস্ট করে।
নাসেরের সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট রয়েছে বলে জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ঘটনা সূত্রে দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) নামের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ওয়াশিংটন স্টেট চ্যাপ্টার (কেয়ার-ডব্লিউএ) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে মাইক্রোসফটকে এই দুই কর্মীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে তাদেরকে আবারও চাকরিতে পুনর্বহালের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কেয়ার-ডব্লিউএ’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান সিদ্দিকি বলেন, ‘বিবেকবান কর্মী, যারা বর্তমান সময়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাদেরকে কর্পোরেট দুনিয়ায় নিশ্চুপ করে দেওয়ার এটি আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ।’
কেয়ারের জাতীয় নির্বাহী পরিচালক নাহিদ আওয়াদ বলেন, ‘অন্য যেকোনো প্রেক্ষাপটে, একটি কর্পোরেশন মানবাধিকারের পক্ষে ও গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কর্মীদের সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু ফিলিস্তিন।’