
ফাইল ছবি
অফিস হোক কিংবা ব্যক্তিগত কাজে ল্যাপটপ এখন দরকারি অনুষঙ্গ। তাই কমবেশি সবাইকে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই দরকারি জিনিসটা মোটেও সহজ কাজ নয়। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি ভালো ল্যাপটপ খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে কিছু বিষয় জানা থাকলে ল্যাপটপ কেনার মতো কঠিন কাজও সহজ হয়ে যাবে।
ল্যাপটপ কেনার সময় কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তা নিয়ে এই লেখা। এগুলো জানা থাকলে আপনি প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
অপারেটিং সিস্টেম : একটি ল্যাপটপের ভিত্তি হলো অপারেটিং সিস্টেম। বাজারে চার ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের ল্যাপটপ পাওয়া যায়। এখানে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
উইন্ডোজ : এই অপারেটিং সিস্টেমের প্রচলন সবচেয়ে বেশি। এতে প্রচুর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সাপোর্ট থাকে। যারা মাইক্রোসফট অফিস ও অন্যান্য উইন্ডোজনির্ভর অ্যাপ্লিকেশনের ওপর নির্ভর করেন তাদের জন্য এই অপারেটিং সিস্টেম আদর্শ পছন্দ।
ম্যাক : এটিকে বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম বললে ভুল হবে না। কারণ সহজ ইউজার ইন্টারফেস ও অ্যাপলের অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে তৈরি ইকোসিস্টেম একে বিশেষ করেছে। যারা চমৎকার ডিজাইন ও ব্র্যান্ডপ্রেমী তাদের জন্য ম্যাক ওএস অপারেটিং সিস্টেম।
ক্রোম : হালকা ও ক্লাউডভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ক্রোম। মূলত ওয়েবভিত্তিক কাজের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। যারা ওয়েবভিত্তিক কাজের জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তারা এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের কথা ভাবতে পারেন।
লিনাক্স : বহুমুখী ও কাস্টোমাইজযোগ্য ওপেন-সোর্স অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স। প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য লিনাক্স হতে পারে সেরা পছন্দ।
প্রসেসর : ল্যাপটপের মস্তিষ্ক হলো প্রসেসর। ল্যাপটপের বেশির ভাগ কাজ পরিচালনা করে প্রসেসর। বাজারে দুটি প্রসেসর কোম্পানি আছে। একটি হলো ইন্টেল এবং অন্যটি এএমডি।
ইন্টেল : বাজারে ইন্টেলের অনেক ধরনের প্রসেসর আছে। যেমন- কোর আই ৩, কোর আই ৫, কোর আই ৭ এবং কোর আই ৯ সিরিজ। সংখ্যা যত বেশি, প্রসেসর তত শক্তিশালী। কিন্তু এর বিভিন্ন প্রজন্ম রয়েছে। যত নতুন প্রজন্মের নেওয়া সম্ভব ততই ভালো।
এএমডি : যাদের বাজেট কম তারা এএমডি প্রসেসর নিতে পারেন। সাধারণত এ ধরনের প্রসেসরের ল্যাপটপকে বাজেট অপশন বলা যেতে পারে। এএমডির প্রসেসরগুলো হলো রাইজেন ৩, রাইজেন ৫, রাইজেন ৭ এবং রাইজেন ৯ সিরিজ। এএমডি প্রসেসসের ল্যাপটপের দাম একটু কম হলেও ব্যবহার করে মজা আছে।
গ্রাফিক্স কার্ড (জিপিইউ) : আমরা ল্যাপটপের পর্দায় যে ভিজ্যুয়াল দেখি, এই কাজটিই করে গ্রাফিক্স কার্ড বা জিপিইউ। বেশির ভাগ ল্যাপটপে ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ থাকে। কিন্তু গেমিং, ভিডিও সম্পাদনা ও ত্রিমাত্রিক রেন্ডারিংয়ের মতো কাজের জন্য ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড দরকার।
র্যাম : ল্যাপটপে যত বেশি র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি বা র্যাম থাকবে ল্যাপটপ তত ভালো চলবে। সাধারণ ব্যবহারের জন্য আট গিগাবাইটের র্যাম হলেই হয়। কিন্তু ভারী মাল্টিটাস্কিং কাজের জন্য ১৬ গিগাবাইট বা ৩২ গিগাবাইট র্যাম ব্যবহার করাই ভালো।
স্টোরেজ : ফাইল, অ্যাপ্লিকেশন ও অপারেটিং সিস্টেম সংরক্ষণ করে স্টোরেজ ড্রাইভ। সাধারণত এইচডিডি (হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ) বড় স্টোরেজের কাজ করে ও সাশ্রয়ী। কিন্তু এসএসডির তুলনায় ধীর ও কিছুটা পুরোনো। এসএসডি
(সলিড-স্টেট ড্রাইভ) দ্রুত কাজ করে, ব্যাটারি লাইফ ভালো রাখে। তাই এইচডিডির মতো ক্রাশ করার ভয় নেই। প্রতি গিগাবাইট হিসাব করে এর দাম বেশি হয়।
ডিসপ্লে : একটি ল্যাপটপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্ভবত ডিসপ্লে। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় প্রয়োজন ও ব্যবহারের অভ্যাস অনুযায়ী ডিসপ্লের মাপ নির্বাচন করতে হবে। বড় ডিসপ্লে প্রডাক্টিভিটি ও মিডিয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য ভালো। কিন্তু ছোট ডিসপ্লে লেখালেখি বা টুকটাক কাজের জন্য ভালো। তা ছাড়া ছোট ডিসপ্লের ল্যাপটপ বহন করা তুলনামূলক সহজ হয়। ল্যাপটপ কেনার আগে মাথায় রাখবেন ডিসপ্লের আকারের ওপর ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেকটা নির্ভর করে। যত বড় ডিসপ্লে, তত ব্যাটারির ক্ষয় হবে।
ব্যাটারির আয়ু : যারা বিভিন্ন কাজে প্রায়ই বাইরে যান এবং সেই কাজের জন্য ল্যাপটপ অত্যাবশ্যকীয়। তার জন্য ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ দরকার। অবশ্য প্রসেসর, ডিসপ্লে, স্টোরেজ ও ব্যবহারের ধরন ব্যাটারির ব্যাকআপে প্রভাব ফেলে। তাই এ ধরনের মানুষের জন্য উচ্চক্ষমতার ব্যাটারি ও পাওয়ার-সেভিং ফিচার আছে এমন ল্যাপটপ বেশি উপযোগী।
কানেক্টিভিটি : ল্যাপটপ কেনার আগে অবশ্যই দরকারি কানেক্টিভিটি আছে কি না তা যাচাই করে নিন। যেমন- ইউএসবি-এ,
ইউএসবি-সি, এইচডিএমআই, থান্ডারবোল্ট ও হেডফোন জ্যাক। এ ছাড়াও ওয়্যারলেস কানেক্টিভিটি অপশনও দেখে নিতে হবে। যেমন- ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ।
ওজন : যদি বাইরে ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ দরকার হয়, তাহলে হালকা ও কমপ্যাক্ট ল্যাপটপ বেছে নিন। স্ক্রিনের আকার, কী দিয়ে তৈরি ও ব্যাটারির ব্যাকআপের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখুন।
বাজেট : একটি ল্যাপটপ কেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাজেট নির্ধারণ। এ জন্য শুরুতে সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেট ঠিক করতে হবে। তারপর সেই বাজেটের মধ্যে বাজারের যেসব ল্যাপটপ আছে সেগুলোর তালিকা করতে হবে। সেই তালিকা থেকে ভালো ল্যাপটপটি বেছে নিতে হবে।
ওপরের বিষয়গুলো জানা থাকলে ল্যাপটপ কেনার ব্যাপারে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবুও ল্যাপটপ কেনার সময় অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিতে পারেন। তাহলে তিনি আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।