
বৈদ্যুতিক গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
কয়েক বছর ধরে আলোচনায় ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি। তারপর এ নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা হয়েছে। বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করছে। শুধু তা-ই নয়, উন্নত বিশ্বে দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। বাজারে বর্তমানে অনেক মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি পাওয়া যায়। তার মধ্যে সেরা ১০টি নিয়ে এই আয়োজন।
কাপরা বর্ন
এই তালিকার শীর্ষে আছে কাপরা বর্ন। এই গাড়িটির আকার, ব্যবহার উপযোগিতা, ওজন, শক্তি ও দামের কারণে ক্রেতাদের শীর্ষ পছন্দ। কাপরা বর্নের অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আছে। শুধু তা-ই নয়, দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়। কাপরা বর্ন একবার চার্জ করার পর ২২০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। তা ছাড়া অন্যান্য বৈদ্যুতিক গাড়ির চেয়ে কাপরা বর্ন দামে সাশ্রয়ী। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হলো স্ট্যান্ডার্ড গাড়ির চেয়ে কাপরা বর্নের গতি এক সেকেন্ডের বেশি।
মার্সিডিজ বেঞ্জ ইকিউএস
টেসলা মডেল এস চালুর সময় ইন-কার ডিজিটাল প্রযুক্তি গাড়ির দুনিয়ায় প্রবেশ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রমাণ করতে চাইছে, এখনো সিলিকন ভ্যালিতে যেকোনো কিছু তৈরি করা যায়। ২০২১ সালে যখন মার্সিডিজ বেঞ্জ ইকিউএস এসেছিল, তখন বাজারে ভালোই হাকডাক ফেলেছিল। এর আছে একটি বড় হেড-আপ ডিসপ্লে, বিশাল ১৭ দশমিক ৭ ইঞ্চি ইনফোটেইনমেন্ট টাচস্ক্রিন। যারা গাড়িতে প্রচুর টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি পছন্দ করেন, তাদের জন্য শীর্ষ পছন্দ হতে পারে এই গাড়িটি। মার্সিডিজ কেবল গাড়িতে বিশাল টাচস্ক্রিন ব্যবহার করছে না, বরং তৃতীয় প্রজন্মের এমবিইউএক্স ইনফোটেইনমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করেছে। এটি বাজারের সেরা বিলাসবহুল বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর মধ্যে একটি।
মার্সিডিজ বেঞ্জ ইকিউএস এসইউভি
একসময় ভ্রমণে আরামকে প্রাধান্য দেওয়াই ছিল নতুন গাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যদিও ২০ শতকের শেষ দিকে সেখান থেকে বের হয়ে আসে গাড়ি কোম্পানিগুলো। কিন্তু বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে আবার তারই যেন পুনরুত্থান হলো। অবশ্য বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো বেশ ব্যয়বহুল। তাই এটা আরামদায়ক হবে সেটাও স্বাভাবিক। কিন্তু সব গাড়ির ক্ষেত্রে সেই সুবিধা মেলে না। তবে যারা ভ্রমণে আরামকে অগ্রাধিকার দিতে চান, তাদের জন্য সেরা বৈদ্যুতিক গাড়ি হলো মার্সিডিজ ইকিউএস এসইউভি। এই গাড়ির হাই-রাইজ সেভেন-সিটার রাইড আপনাকে কোনো শব্দই বুঝতে দেবে না। আবার মাইলেজও বেশ ভালো।
এমজি ফোর ইভি
যদি ব্রিটিশদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনেছেন কি না। তাদের বেশির ভাগের প্রতিক্রিয়া হবে, তারা অতিরিক্ত ব্যয় করতে আগ্রহী নন। এ ছাড়া তারা ব্যাটারির চার্জের ওপর ভরসা করতে পারেন না। কিন্তু এসএআইসি এই সমস্যার সমাধান এনেছে। চীনে তৈরি হওয়া এমজি ফোর ইভি যুক্তরাজ্যের ক্রেতাদের জন্য তিনটি সংস্করণ এনেছে। এগুলোতে ৫১ কিলোওয়াট, ৬৪ কিলোওয়াট ও ৭৭ কিলোওয়াট সক্ষমতার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাটারির সক্ষমতার ভিত্তিতে দাম কম-বেশি হবে। সবচেয়ে ছোট ব্যাটারিতে যাওয়া যাবে ২১৮ মাইল এবং বড়টিতে যাওয়া যাবে ৩২৩ মাইল। এতে রয়েছে প্রশস্ত চার আসনের কেবিন।
রোলস রয়েস স্পেক্টর
রোলস রয়েসের সহপ্রতিষ্ঠাতা চার্লস রোলস বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিলাসবহুল গাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। অবশেষে তার কোম্পানি বৈদ্যুতিক গাড়ি স্পেক্টর বাজারে এনেছে। রোলস রয়েস স্পেক্টর যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার বাজারে ভালো ব্যবসা করেছে। এই গাড়িটির রাইড ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে স্পেক্টরের বিশাল (২৩ ইঞ্চি) চাকাগুলো নজর কাড়বে।
ভক্সওয়াগন আইডি বাজ
ভক্সওয়াগন অবশেষে আইডি বাজ দিয়ে আবারও আইকনিক টাইপ টু ‘মাইক্রোবাস’ আনতে পেরেছে। এই গাড়িটি আকারে কিছুট বড় মনে হতে পারে। কিন্তু প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য বেশ উপযোগী। এই গাড়িটি বাইরে থেকে দেখে মনে হতে পারে, এটি একটি পরিবারের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু ভেতরে অনেক জায়গা রয়েছে। মূলত বিলাসিতার চেয়ে জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এ জন্য গাড়িটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর-হুইল-ড্রাইভ, ক্যাম্পার ভ্যান ও জিটিএক্স সংস্করণে আনার পরিকল্পনা করেছে। এক কথায় বলতে গেলে, বাজ একটি সুপার ব্যাবহারিক বৈদ্যুতিক গাড়ি।
টেসলা মডেল থ্রি
টেসলা মডেল থ্রি এখনো বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে আগের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপে টেসলা মডেল থ্রির চাহিদা সে কথাই বলছে। মূলত টেসলা মডেল থ্রি একটি অলরাউন্ডার গাড়ি। এ বছর মডেল থ্রির প্রযুক্তি আরো আপডেট হয়েছে। পুরোনো মডেল থ্রি আরো পরিমার্জন করা হয়েছে। যদিও গাড়িটি যতটা আরামদায়ক হওয়া উচিত ততটা নয়। বর্তমান সংস্করণে গাড়িটির মাইলেজ ২৫৪ থেকে বাড়িয়ে ৩৪৪ করা হয়েছে।
হুন্দাই ই আয়নিক ফাইভ এন
আয়নিক ফাইভ এন ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়িটি একটি স্পোর্টস কার। এতে ডুয়াল-মোটর সেট-আপ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি খুব দ্রুতগতির একটি গাড়ি। হুন্দাই দাবি করেছে, এই গাড়িটির ৮৯ কিলোওয়াটের ব্যাটারি এক চার্জে ২৭৮ মাইল যেতে পারবে। তবে স্বাভাবিক স্পোর্টস কারের চেয়ে এটি ভারী ও কিছুটা বড়। এতে এমন একটি সাউন্ড জেনারেটর ব্যবহার করা হয়েছে, যা গিয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শব্দ পরিবর্তন করে দেবে।
ভক্সওয়াগন আইডি সেভেন
ভক্সওয়াগন আইডি সেভেন গাড়িটিকে পছন্দ করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। এটি জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিটির প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি। যারা দীর্ঘপথ ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য আদর্শ পছন্দ আইডি সেভেন। এতে সিঙ্গেল মোটর সেট-আপ ব্যবহার করা হয়েছে। এই মডেলটিতে ৮৬ কিলোওয়াট সক্ষমতার ব্যাটারি রয়েছে এবং এক চার্জে ৪০০ মাইল পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। এই গাড়িটির চার্জিং গতি ২০০ কিলোওয়াট। আইডি সেভেন টেসলা মডেল থ্রি বা বিএমডাব্লিউ আই ফোরের মতো স্পোর্টি নয়, তবে দেখতে বেশ নান্দনিক।
পোর্শে টাইকান
বিলাসবহুল গাড়ির ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বব্যাপী বেশ খ্যাতি আছে পোর্শের। ব্র্যান্ডটি প্রথম টাইকান এনেছিল ২০১৯ সালে। তখন গাড়িটি নকশা, মাইলেজ ও দ্রুত চার্জিং গতির জন্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ভালো খবর হলো টাইকানের আপডেট আসতে চলেছে। যে গাড়িটির পারফরম্যান্স আরো ভালো হবে। টাইকানের ৯২ কিলোওয়াট ব্যাটারির ওজন ৬৫০ কেজি। তাই এই গাড়িটিকে সবচেয়ে হালকা বৈদ্যুতিক গাড়ি বলা যাচ্ছে না। তবে পোর্শে গ্রাহকদের দারুণ কিছু উপহার দিতে চায়। টাইকানে সিঙ্গেল মোটর সেটআপ ব্যবহার করা হয়েছে।