
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতীকী ছবি
মানুষের সহজাত প্রবণতা চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা। কিন্তু একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।
কিছুদিন আগেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছিল দূর ভবিষ্যতের কাল্পনিক বিষয়। কিন্তু এখন এআই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হতে শুরু করেছে। এর প্রধান কারণ মানুষ ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে যে, হঠাৎ করে অকল্পনীয় ডাটা তৈরি হয়েছে এবং সেই ডাটাকে প্রক্রিয়া করার মতো কম্পিউটার আমাদের হাতে চলে এসেছে। এই ডাটা বা তথ্যকে প্রক্রিয়া করার জন্য বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, যেটি মানুষের মস্তিষ্কের মতো করে কাজ করে। সাধারণভাবে এটা নিউরাল নেট নামে পরিচিত। সহজভাবে বলা যায় এর একটি ইনপুট স্তর এবং আউটপুট স্তর রয়েছে, যার মাঝখানের স্তরটি হচ্ছে ‘লুক্কায়িত’ স্তর।
প্রথমে এই নিউরাল নেটকে ইনপুট ও তার সঙ্গে যুক্ত আউটপুট ডাটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তখন লুক্কায়িত স্তরটি এমনভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে যেন প্রশিক্ষণের জন্য দেওয়া ইনপুটের জন্য সত্যি আউটপুটটি পাওয়া যায়। একবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে গেলে এই নিউরাল নেটকে সম্পূর্ণ নতুন ইনপুট দিলেও সেটি সম্ভাব্য সঠিক আউটপুটটি দিতে পারবে। যত বেশি ডাটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, নিউরাল নেটটি তত ভালো কাজ করবে। একটি লুক্কায়িত স্তর না রেখে একাধিক স্তর দিয়ে এই নেটকে আরো অনেক বুদ্ধিমান করা সম্ভব। তখন নেটটি নিজেই ডাটা ব্যবহার করে শিখে নিতে পারবে। এই প্রক্রিয়ার নাম ‘ডিপ লার্নিং’ এবং বলা যেতে পারে এটি সত্যিকারের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সবচেয়ে কাছাকাছি একটি প্রক্রিয়া।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানত C/C+, java MATLAB, PZthon, SHRDLU, PROLOG, LISP, CLISP, R ইত্যাদি প্রগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়। কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে ডেভেলপাররা পছন্দমতো প্রগ্রাম ব্যবহার করেন।
এআই টুল ব্যবহারে সাবধান
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল ব্যবহার করে সহজেই কৃত্রিমভাবে ভিডিও ও ছবি তৈরি করা যায়। আর তাই অনেকেই শখের বশে বা কাজের প্রয়োজনে কৃত্রিম ভিডিও ও ছবি তৈরির জন্য এআই টুল ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীদের এ আগ্রহ কাজে লাগিয়ে ভিডিও ও ছবি তৈরির ভুয়া এআই টুলের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। ভুয়া এআই টুলগুলো নামালেই কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে তথ্য চুরি করতে থাকে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিডিও ও ছবি তৈরির ভুয়া এআই টুলগুলোর মাধ্যমে উইন্ডোজ ও ম্যাকওএস অপারেটিং সিস্টেমে চলা কম্পিউটারে ‘লুমা স্টিলার’ ও ‘এএমওএস ইনফোস্টিলার’ নামের ম্যালওয়্যার প্রবেশ করাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। ম্যালওয়্যারগুলো কম্পিউটারে প্রবেশ করেই ব্যবহারকারীদের ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট, পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের তথ্যসহ ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাস সংগ্রহ করে সাইবার অপরাধীদের কাছে পাঠাতে থাকে।
তাই ভিডিও ও ছবি তৈরির ভুয়া এআই টুল থেকে নিরাপদ থাকতে ডাউনলোডের আগে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
নৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে এআই!
একবার ভাবুন তো, কেমন হতো যদি জীবনের খুব জটিল কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। কিংবা জীবনের জটিল কোনো মোড়ে আপনি ডানে যাবেন না বাঁয়ে, সেটা এআই ঠিক করে দেয়। তাহলে কেমন হয়?
এই মুহূর্তে বিষয়টি অনেকের কাছে কল্পনাতীত মনে হতে পারে। কিন্তু আজকে যেটা কল্পনা বলে মনে হচ্ছে, সেটাই বাস্তবে পরিণত হতে খুব বেশি দিন হয়তো না-ও লাগতে পারে। সম্প্রতি জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক নৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এমন এআই টুল তৈরির উদ্দেশ্যে অ্যালগরিদম নিয়ে গবেষণা করছে। ‘রিসার্চ এআই মর্যালিটি’ নামের এই গবেষণা প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে ওপেন এআই। যদিও এই প্রজেক্ট নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। শুধু জানা গেছে, গবেষণায় তৈরি এআই অ্যালগরিদম নৈতিক বিষয়ে মানুষের নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে এআই
প্রযুক্তি সংস্থা মেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ওপর ভিত্তি করে একটি বিশেষ প্রযুক্তির অধীনে কাজ করে। এর সাহায্যে মেটা ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে এমন ব্যক্তিদের খুঁজে পায়, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছে। এই প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে কাজ করে। এটি ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের লেখা শব্দগুলো পড়ে এবং বোঝে। কেউ যদি এমন কিছু লিখে থাকে, যা বলে যে সে আত্মহত্যা করতে চায়, এই প্রযুক্তি তা দ্রুত শনাক্ত করে। এ ছাড়া ভিডিও বা লাইভও দেখা হয় এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এমনকি যদি ভিডিওতে কেউ এমন কিছু করে যা দেখে মনে হয় সে নিজের ক্ষতি করতে চায়, এই প্রযুক্তি তখন সতর্ক করে দেয়।
এভাবে কোনো বার্তা বা পোস্ট শনাক্ত করার পর তা সঙ্গে সঙ্গে একটি বিশেষ দলকে জানিয়ে দেয়। তারপর ওই দলটি খুব সাবধানে এই বার্তাগুলো দেখে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে এই ব্যক্তির কোনো সাহায্যের প্রয়োজন কি না। সাহায্যের প্রয়োজন হলে দলটি পুলিশ বা জরুরি পরিষেবাগুলোকে সতর্ক করে।
ইউরোপের প্রথম এআই গায়ক
জার্মানির ব্রেমেনের একটি কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় ইউরোপের প্রথম এআই গায়ক বেন গায়াকে তৈরি করেছে। গত জুলাইয়ে তার প্রথম গান ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করা হয়। সেখানে গানটি অনেকবার দেখা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি প্রশংসাও করেছেন।
ফ্লোরিয়ান শামব্যার্গার, পিয়া শ্রাইবার ও তাদের দল তিন মাসে বেন গায়াকে তৈরি করেছেন। পিয়া শ্রাইবার বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার ছিল গবেষণা। আমরা জানতে চাই, এআই দিয়ে কী করতে পারি, এআই আমাদের জীবনে আর কী কী প্রভাব ফেলতে পারে, ডিজিটাল ব্যবসায় এআই আরো কীভাবে সহায়ক হতে পারে, অর্থাৎ কোথায় এবং কীভাবে এটাকে কাজে লাগাতে পারি।’