নোমোফোবিয়া: আধুনিক জীবনের এক অদৃশ্য সন্ত্রাস

সাফিন আহমেদ
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:০১

প্রতীকী ছবি
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন ফোন নেই। কারো সঙ্গে কথা বলার উপায় নেই, নোটিফিকেশনের টুং টুং শব্দ নেই কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর সুযোগ নেই। এতে কি স্বস্তি অনুভব করবেন, নাকি অস্থিরতায় ডুবে যাবেন? আজকের জীবনে স্মার্টফোন যেন হৃৎস্পন্দনের মতো। এর অনুপস্থিতি অনেকের জন্য এক অসম্ভব বিরক্তির পরিস্থিতি তৈরি করে। এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতাই জন্ম দিয়েছে এক নতুন ভীতি- নোমোফোবিয়া। নোমোফোবিয়া শব্দটি এসেছে ইংরেজি ‘No Mobile phone phobia’ থেকে। এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোন না পেলে বা মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেলে অসহনীয় মানসিক অস্বস্তি অনুভব করেন।
নোমোফোবিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত কাটানো অসম্ভব মনে হওয়া, ফোনের নেটওয়ার্ক বা চার্জ শেষ হওয়ার ভয়, ফোন কোথাও ভুলে ফেলে যাওয়ার চিন্তায় আতঙ্কিত হয়ে পড়া, ফোন ব্যবহার না করতে পারলে উদ্বেগ, হতাশা বা একাকিত্ব অনুভব করা, ঘুমানোর সময়েও ফোন হাতের কাছেই রাখা।
নোমোফোবিয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে, তবে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভরতা : ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে সারাক্ষণ সংযুক্ত থাকার আকাঙ্ক্ষা।
ফোমো (FOMO) : ‘OFear of Missing Out’ বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বা ঘটনা মিস করার ভয়।
ডিজিটাল আসক্তি : ফোনের মাধ্যমে বিনোদন, সংবাদ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ এতটাই সহজ যে মানুষ এটিকে অতিরিক্ত নির্ভর করে ফেলছে।
মানসিক নিরাপত্তাহীনতা : ফোনের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত না থাকলে অনেকেই নিজেকে একা মনে করেন।
নোমোফোবিয়ার প্রভাব
নোমোফোবিয়া কেবল মানসিক অস্বস্তি নয়; এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- উদ্বেগ, হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব, দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করার ফলে চোখের সমস্যা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা, ও ঘুমের ব্যাঘাত, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি সময় কাটানোর অভ্যাস কমে যায়, কাজের সময় ফোন ব্যবহার করলে মনোযোগ বিভক্ত হয়, যা উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে।
সমাধান ও করণীয়
নোমোফোবিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রিত ফোন ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- ডিজিটাল ডিটক্স বা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন থেকে দূরে থাকুন। পরিবার বা প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন, যাতে ফোনে কম সময় ব্যয় হয়। বই পড়া বা ব্যায়ামের মতো কার্যক্রমে মনোযোগ দিন। ফোন ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। বিশেষত ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। যদি নোমোফোবিয়া অতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করে, তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।