
প্রতীকী ছবি
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থানে ২০৩০ সালের মধ্যে কিছু চাকরি হারিয়ে যেতে পারে।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে ডব্লিউইএফের ফিউচার অব জবস রিপোর্টে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাংক টেলার, ক্যাশিয়ার, পোস্টাল কর্মী, প্রশাসনিক সহকারীসহ বেশ কিছু চাকরি হারিয়ে যেতে পারে। এই সময়ে নতুন চাকরি সৃষ্টি ও কাজের ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমে ২২ শতাংশ চাকরি পরিবর্তিত হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতে ১৭০ মিলিয়ন নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে, যা বর্তমান কর্মসংস্থানের ১৪ শতাংশের সমান। তবে একই সময়ে ৯২ মিলিয়ন চাকরি হারানোর আশঙ্কা আছে। নতুন চাকরি সৃষ্টি ও কিছু চাকরি বিলুপ্ত হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৮ মিলিয়ন চাকরি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
ডব্লিউইএফ বলছে, বিশ্বের ৫৫টি দেশের ২০টির বেশি শিল্পের ১৪ মিলিয়ন কর্মীর ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেমনÑকীভাবে প্রযুক্তিগত উন্নতি, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সবুজ রূপান্তর বৈশ্বিক চাকরি ও দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলবে।
তবে কৃষক, ডেলিভারি ড্রাইভার, নির্মাণ শ্রমিক, বিক্রয়কর্মী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কর্মীসহ কেয়ার ইকোনমি (মানুষের সেবা) বিষয়ক চাকরির চাহিদা বাড়বে। এর মধ্যে নার্স, সমাজকর্মী, কাউন্সিলর ও কেয়ার ইকোনমির চাকরির সুযোগ বাড়বে। এ ছাড়া শিক্ষকদের চাহিদাও বাড়বে আগামী পাঁচ বছরে।
এ ছাড়া প্রযুক্তিবিষয়ক চাকরি, বিশেষত বিগ ডাটা স্পেশালিস্ট, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার, এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ ও সফটওয়্যার ডেভেলপারদের চাহিদা বাড়বে। এ ছাড়া ‘সবুজ ও শক্তি রূপান্তর’ সম্পর্কিত চাকরিগুলোর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ও বৈদ্যুতিক যানবাহন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ প্রকৌশলী এবং নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকৌশলীদের চাহিদা বাড়বে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদার শীর্ষে থাকবে এআই, বিগ ডাটা ও সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত দক্ষতা। নিয়োগকর্তারা এরই মধ্যে এআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ সম্পাদন) শুরু করেছে। তবে মানবিক দক্ষতা, যেমনÑসৃজনশীল চিন্তাভাবনা, স্থিরতা, অভিযোজনশীলতা ও গতি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষত, নিয়োগকর্তাদের কাছে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা হিসেবে গুরুত্ব পাবে বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা, যেখানে ৭০ শতাংশ কোম্পানি এটিকে অপরিহার্য বলে মনে করছে।
কর্মীরা ভাবতে পারেন, আগামী পাঁচ বছরে তাদের বর্তমান দক্ষতার ৩৯ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় দক্ষতা পরিবর্তনের হার কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ছিল ৪৪ শতাংশ। কারণ কর্মীরা নিজের দক্ষতা বাড়াতে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণে মনোযোগ দিচ্ছেন।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এই রিপোর্ট বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাবে আগামী দশকে চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।