Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বিস্ময়কর সম্ভাবনা

Icon

আবরার তালুকদার

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৮

কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বিস্ময়কর সম্ভাবনা

প্রতীকী ছবি

কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও ক্লাসিক্যাল সুপারকম্পিউটারের মধ্যকার প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি একদল গবেষক দাবি করেছেন, কোয়ান্টাম অ্যানিলিং প্রসেসর মাত্র কয়েক মিনিটে এমন একটি জটিল বাস্তব সমস্যার সমাধান করেছে, যা একটি ক্লাসিক্যাল সুপারকম্পিউটার সম্পন্ন করতে কয়েক লাখ বছর লেগে যেত। ১২ মার্চ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ দাবি করা হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই সমাধান প্রক্রিয়ায় সুপারকম্পিউটার যে পরিমাণ শক্তি খরচ করবে, তা পুরো পৃথিবীর এক বছরের শক্তি খরচের চেয়েও বেশি হবে। তবে অন্য একদল গবেষক দাবি করছেন, একই সমস্যার একটি অংশ ক্লাসিক্যাল সুপারকম্পিউটার দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে সমাধান করা সম্ভব। 

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি ব্যবহার করে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুত জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। আবার কোয়ান্টাম কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতাও অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাত্ত্বিকভাবে এই ক্ষমতা কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের চেয়ে অনেক দ্রুত সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে। 

এই নতুন পরস্পরবিরোধী ফলাফল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করা অনুরূপ দাবির ধারাবাহিকতা। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উদীয়মান ক্ষেত্রটি সুপারকম্পিউটারগুলোকে আরো দক্ষ করার কৌশলগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে একটি নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের তুলনায় সত্যিকারের এলোমেলো সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পেরেছে। তবে বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে এটি এখনো সুস্পষ্ট প্রভাব দেখাতে পারেনি।

সম্প্রতি কানাডার ডি-ওয়েভ কোয়ান্টাম ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা একটি কোয়ান্টাম অ্যানিলিং প্রসেসর ব্যবহার করে এক গুরুত্বপূর্ণ সিমুলেশন পরিচালনা করেন। অ্যানিলিং প্রসেসর অন্যান্য কোয়ান্টাম প্রসেসরের তুলনায় কিছু নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে বেশি কার্যকর। 

এই প্রসেসরগুলো বড় সমস্যা সমাধানে আরো উপযুক্ত। কারণ এর কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিটগুলো অন্যান্য কোয়ান্টাম প্রসেসরের মতো শুধু একটি কিউবিটের পরিবর্তে অনেক কিউবিটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তবে এগুলো শুধু অপ্টিমাইজেশন সমস্যার মতো নির্দিষ্ট ধরনের সমস্যার জন্য উপযোগী। 

এই নতুন ফলাফলের জন্য ডি-ওয়েভ গবেষকরা কোয়ান্টাম অ্যানিলিং প্রসেসর ব্যবহার করে কোয়ান্টাম ডাইনামিক্স সিমুলেশন করেছেন। তারা ম্যাগনেটাইজড স্পিন গ্লাসের গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন, যা উন্নত ধাতব পদার্থ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে। 

গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘এটি মূলত চৌম্বকীয় পদার্থের সিমুলেশন। চৌম্বকীয় উপাদান শিল্প ও দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মোবাইল ফোন, হার্ড ড্রাইভ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষ সেন্সরে ব্যবহৃত হয়।’ গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার দুই, তিন ও অসীম মাত্রায় এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। যেখানে সুপারকম্পিউটার অনুমানের ভিত্তিতে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করলেও এটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। 

ডি-ওয়েভের কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু কিং বলেন, ‘এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের একটি মাইলফলক ফলাফল। আমরা প্রথমবারের মতো বাস্তব আগ্রহের একটি প্রকৃত সমস্যার জন্য কোয়ান্টাম শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেছি।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সেন্টারের পরিচালক পদার্থবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল লিডারও মনে করেন, ডি-ওয়েভ দল একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। লিডার এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না। তবে ডি-ওয়েভ ডিভাইসের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই চিত্তাকর্ষক কাজ। তারা সত্যিই তাদের হার্ডওয়্যারে কোয়ান্টাম সিমুলেশন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে, যা বর্তমান ক্লাসিক্যাল পদ্ধতির নাগালের বাইরে।’ 

তবে এই দাবির বিরোধিতা করেছেন নিউইয়র্কের ফ্ল্যাটিরন ইনস্টিটিউটের গবেষক জোসেফ টিন্ডাল ও তার সহকর্মীরা। তারা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার ব্যবহার করে একই সমস্যার একটি অংশ সিমুলেট করেছেন। তারা একটি ক্লাসিক্যাল সুপারকম্পিউটারে ৪০ বছর পুরোনো ‘বিলিফ প্রোপাগেশন’ অ্যালগরিদমের সাহায্যে মাত্র দুই ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের মধ্যে এই সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের গবেষণার ফলাফল এখনো পর্যালোচনাধীন। তাদের গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এটি দুই ও তিন মাত্রার সিস্টেমের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চেয়ে বেশি নির্ভুল। 

তবে গবেষকরা স্বীকার করেছেন, তিন মাত্রার সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে সুপারকম্পিউটার পুরোপুরি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি। আর অসীম মাত্রার ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একমাত্র কার্যকর সমাধান দিয়েছে। এই অসীম মাত্রার সমস্যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রকৃত ক্ষমতা এখনো যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। তবে এটি সুপারকম্পিউটারের তুলনায় বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে কতটা কার্যকর হতে পারে, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫