Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সোশ্যাল মিডিয়ায় এআই ‘পুতুল ট্রেন্ড’: দুশ্চিন্তার জায়গাটা যেখানে

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:২৩

সোশ্যাল মিডিয়ায় এআই ‘পুতুল ট্রেন্ড’: দুশ্চিন্তার জায়গাটা যেখানে

নতুন ডিজিটাল ট্রেন্ড—যেখানে ব্যবহারকারীরা জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) টুল ব্যবহার করে নিজেদের ছোট্ট পুতুল বা অ্যাকশন ফিগারে রূপান্তর করছেন। ছবি: সংগৃহীত

সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইনে চোখ রাখলে হালে দেখা মিলছে কিছু ‘অতি পরিচিত মুখ’—তবে এবার তারা ক্ষুদ্র-আকারে! কারও হাতে মাইক্রোফোন, কারও পায়ে কনভার্স, কেউ আবার প্যাকেটজাত হয়ে বসে আছেন ‘বার্বি-বক্স’-এর ভেতর।

এটা কোনো নতুন খেলনার বিজ্ঞাপন নয়। বরং এটি এক নতুন ডিজিটাল ট্রেন্ড—যেখানে ব্যবহারকারীরা জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) টুল ব্যবহার করে নিজেদের ছোট্ট পুতুল বা অ্যাকশন ফিগারে রূপান্তর করছেন।

এই ‘মিনি-হিউম্যান’ ট্রেন্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মজেছে সাধারণ ব্যবহারকারীরা থেকে শুরু করে বিউটি ব্র্যান্ড ‘মারিও বাদেস্কু’, এমনকি রয়্যাল মেইলের মতো প্রতিষ্ঠানও।

তবে অনেকেই বলছেন—এই মজার ট্রেন্ডের পেছনে রয়েছে কিছু অস্বস্তিকর বাস্তবতা।

কীভাবে তৈরি হয় এই ‘ডিজিটাল পুতুল’?

প্রক্রিয়াটি আসলে বেশ সোজা। ব্যবহারকারী একটি সেলফি আপলোড করেন, সঙ্গে দেন কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা বা প্রম্পট—যেখানে থাকে কাঙ্ক্ষিত পোশাক, প্যাকেজিং, নাম, পেশা এবং অন্যান্য অ্যাকসেসরিজের বিবরণ।

এরপর এআই টুল সেই অনুযায়ী ছবি তৈরি করে। কেউ চাইলে নিজেকে ‘টেক জার্নালিস্ট বার্বি’ বানাতে পারেন, কেউ আবার ‘রকস্টার অ্যাকশন ফিগার’।

তবে ছবিগুলোর মান সবসময় নিখুঁত হয় না। কখনো চোখের রং মিলে না, কখনো বয়স বেড়ে যায়, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যাকশন ফিগার একেবারেই অচেনা হয়ে যায়।

কেন এত জনপ্রিয় হলো ট্রেন্ডটি?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রেন্ড মানেই ‘এফওএমও’—ফিয়ার অফ মিসিং আউট। কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেই ভয়ে সবাই হুড়োহুড়ি করে ট্রেন্ডে যোগ দেন।

eMarketer-এর সামাজিক যোগাযোগ বিশ্লেষক জেসমিন এনবার্গ বলেন, “জেনারেটিভ এআই-এর কারণে ট্রেন্ডে অংশ নেওয়া এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ ও দ্রুত। তবে এতে করে ট্রেন্ডের প্রতি বিরক্তি আসার গতিও বাড়ছে।”

তার মতে, ভবিষ্যতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এআই-চালিত ট্রেন্ডই হয়ে উঠবে নতুন স্বাভাবিক।

এই ‘মিনি-হিউম্যান’ ট্রেন্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মজেছে সাধারণ ব্যবহারকারীরা। ছবি: ইনস্ট্রাগ্রাম

তবে সমস্যাটি ছোটও নয়

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এই ট্রেন্ড যতটা নিরীহ মনে হয়, পরিবেশগত ও নৈতিক দিক দিয়ে তা ততটাই গুরুতর।

লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গিনা নেফ জানান, “চ্যাটজিপিটি এবং এই ধরণের এআই টুলগুলো বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। শুধু ডেটা সেন্টারগুলোই বছরে যত বিদ্যুৎ খরচ করে, তা ১১৭টি দেশের বার্ষিক ব্যবহারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।”

টেকরাডার-এর সম্পাদক ল্যান্স উলানফ ব্যঙ্গ করে বলেন, “আমার বাসায় একটা কথা চালু আছে—প্রতিবার আমরা যখন একটা এআই মিম বানাই, একটা গাছ মারা যায়।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ট্রেন্ডে ব্যবহৃত এআই মডেলগুলো ট্রেনিংয়ের জন্য অনেক সময় কপিরাইটযুক্ত ডেটা ব্যবহার করেছে, যার জন্য অনুমতি বা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি—এমন অভিযোগও রয়েছে।

এআই-নির্ভর কনটেন্ট নির্মাণ এখন নতুন এক শিল্প, যার শক্তি যেমন বিপুল, তেমনি তার দায়ও কম নয়। “চ্যাটজিপিটি বার্বি আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ—এই তিনটিকেই চ্যালেঞ্জ করছে,” বলছেন অধ্যাপক নেফ।

সামাজিক যোগাযোগ এবং প্রভাব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান MSL UK-এর পরিচালক জো ব্রোমিলো বলেন, “একটা মজার ছবি কি সত্যিই এতটা মূল্যবান, যে আমরা ভবিষ্যতের ক্ষতি মেনে নেব?”

গবেষকরা বলছেন, ট্রেন্ড সবসময় আসবে, আবার হারিয়েও যাবে। তবে প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যদি শুধুই ‘মজা’র জায়গা থেকে হয়, তাহলে হয়ত আমরা আসল সম্ভাবনাটাই বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি।



Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫