
পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষতিকর পদার্থ হলো প্লাস্টিক। সাম্প্রতিক তথ্যমতে, পৃথিবীর প্লাস্টিক দূষণ সংকটের সমাধান হতে যাচ্ছে খুব শিগগিরই।
২০১৬ সালে একদল জাপানি বিজ্ঞানী প্রথম সেখানকার এক বর্জ্য পরিশোধনাগারে আবিষ্কার করেন, প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বহুল ব্যবহৃত পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট বা পিইটি ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়।
অতি নিকটতম সময়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরাও এই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন, সেই বিজ্ঞানীরাও গবেষণায় দেখেন- ঘটনাক্রমে প্লাস্টিকখেকো এনজাইম তৈরি করেছেন তারা, যা প্লাস্টিকের বোতল ভেঙে ফেলতে আরো বেশি কার্যকর।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ ও যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির একদল বিজ্ঞানী এই এনজাইমের কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিয়মিত পরীক্ষা চালাতে থাকেন। সূর্যের চেয়েও এক হাজার কোটি গুণ উজ্জ্বল অতি উচ্চ ক্ষমতার এক্স-রে ব্যবহার করে তারা পৃথকভাবে পরমাণুকণাগুলো দেখতে পান। এরপর এর কাজের নিয়ম চূড়ান্তভাবে জানার জন্য এটির কাঠামোগত পরিবর্তন করতে গিয়ে ঘটনাক্রমে বিজ্ঞানী দল এই মিউট্যান্ট এনজাইম তৈরি করেছেন।
পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জন ম্যাকগিহান এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আসলে আমরা এই এনজাইমকে উন্নত করেছিলাম, যা ছিল অনাকাক্ষিত। এর ফলে যে নতুন আবিষ্কার ঘটল, তা অদ্ভুত, বিশাল ও সত্যিকারের এক আবিষ্কার।’
এই মিউট্যান্ট এনজাইম প্লাস্টিক ভাঙতে মাত্র কয়েকদিন সময় নেয়, যা মহাসাগরে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। গবেষকরা আশাবাদী যে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুতগতিতে ও বড় পরিসরে তৈরি করা সম্ভব হবে। প্রফেসর জন ম্যাকগীহান বলেন, ‘আমরা যা করতে যাচ্ছি, তা এই এনজাইম ব্যবহার করে প্লাস্টিককে তার মূল উপাদানে ফিরিয়ে আনতে, যাতে করে আক্ষরিকভাবে এটিকে পুনরায় প্লাস্টিকে ব্যবহার করতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর মানে হলো যে আমাদের আর কোনো তেল খনন করতে হবে না এবং মৌলিকভাবে এটি পরিবেশে প্লাস্টিকের পরিমাণ কমাবে।’
এক তথ্য মতে, আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে প্রায় ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয় আর এর মাত্র শতকরা ১৪ ভাগ পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। বাকি সব বোতল সমুদ্রে মিশে সেখানকার পরিবেশ দূষিত করে, সামুদ্রিক জীবনসহ মানুষের জীবনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে পরিমাণ ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা তোলা হয় তা বস্ত্র বা কার্পেটের অস্বচ্ছ সুতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নতুন এই আবিষ্কারের ফলে হয়তো পৃথিবী এই প্লাস্টিক বোতলের মাধ্যমে দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। কেননা, নতুন এই মিউট্যান্ট এনজাইম ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতলকে আবার ব্যবহার উপযোগী পরিষ্কার প্লাস্টিকের বোতলেই রূপান্তরিত করতে সাহায্য করবে।
ফলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন কমবে, এতে হয়তো ব্যবসায়ীরা লাভবান কম হবেন। কিন্তু পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা পাবে, রক্ষা পাবে প্রাণিকুল, নদী-বৃক্ষ, বন-বনানী আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে মানব শিশুর দলও।
তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান