দেশের প্রথম ‘হাইব্রিড সোলার-উইন্ড টাওয়ার’ স্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:২৬

দেশে প্রথমবারের মতো ‘হাইব্রিড সোলার-উইন্ড টাওয়ার’ সল্যুশন স্থাপন করলো সমন্বিত টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সেবা কোম্পানি ‘ইডটকো বাংলাদেশ’। ৭৫ মিটার লম্বা টাওয়ারটি স্থাপন করা হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দ্বীপ হাতিয়ায়।
প্রত্যন্ত এই দ্বীপটিতে কোনো বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় এবং তীব্র জোয়ারের ঝুঁকির কারণে এই এলাকার সাথে সংযোগ রক্ষা করাও খুব কঠিন। নবায়নযোগ্য এই এনার্জি সল্যুশনটি বাংলাদেশে এবারই প্রথম তৈরি হলো। বিশেষত: দেশের যেসব এলাকা জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের অর্ন্তভুক্ত নয়, সেসব এলাকায় প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই এটি তৈরি করা হয়েছে।
উদ্ভাবনী, টেকসই এবং বিদ্যুৎ -সাশ্রয়ী সল্যুশন স্থাপনের মাধ্যমে টেলিকম টাওয়ারগুলোতে বিকল্প শক্তি ব্যবহার করে দেশজুড়ে নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করতে যে প্রচেষ্টা ইডটকো চালিয়ে যাচ্ছে, এই উদ্যোগটি তারই অংশ।
উদ্ভাবনীমূলক এই টাওয়ারটি একটি স্থায়ী গ্রিন হাইব্রিড এনার্জি সল্যুশন দিয়ে গঠিত, যার সর্বোচ্চ ১২ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার থেকে দৈনিক প্রতি ঘণ্টায় ৪২ কিলোওয়াট এবং টাওয়ারের মাথায় বসানো ৪ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ু ঘূর্ণিযন্ত্র থেকে দৈনিক ঘণ্টায় ৬ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব। এভাবেই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করার মাধ্যমে হাইব্রিড পাওয়ার প্ল্যান্টটি টেলিকম সিস্টেমকে সারা বছর সক্রিয় রাখে।
নবায়নযোগ্য এই এনার্জি সল্যুশনটি ডিজেলের ব্যবহার কমানোসহ সার্বিকভাবে টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি প্রকৃতিবান্ধব এই সল্যুশনটি শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম কার্বন নিঃসরণ করে।
হাইব্রিড সিস্টেমটির কিছু বিশেষত্বের মধ্যে রয়েছে- ৩৬০ ডিগ্রি কোণ থেকে বাতাস ধরার জন্য উল্লম্ব অক্ষের উইন্ড টারবাইন। হিদা অনুযায়ী শক্তি পরিমাপ করা যায়। যন্ত্রাংশ লাগানোসহ সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ তুলনামূলক সহজ। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে কম খরচ হয়। পরিবেশবান্ধব এবং নিঃশব্দে চলে।
ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রিকি স্টেইন বলেন- সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে, যে কোন দূরবর্তী অবস্থান কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থার সব জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ইডটকো কাজ করে। কোম্পানির নিজস্ব বিশ্বাসের জায়গা থেকেই আমরা এটা করে থাকি। আর এ ধরণের সল্যুশন আমাদেরকে ওইসব সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সংযোগের আওতায় আনার সুযোগ করে দেয়, সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য যাদের এটি ভীষণ প্রয়োজন। এসব জনগোষ্ঠীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা এমন সব সল্যুশন দেয়ার চেষ্টা করি, যেগুলো গুণমানে টেকসই এবং তাদের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, এটি কেবলমাত্র আমাদের টেকসই শক্তিকে চ্যাম্পিয়ন করার প্রতিশ্রুতির সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং বাংলাদেশের গ্রাম-শহুর নির্বিশেষে সকল জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করার জাতীয় লক্ষ্যের সাথেও দারুণভাবে সম্পৃক্ত। ডিজিটাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী গুলোকে সংযুক্ত করাটা যে অবিচ্ছেদ্য, সেটা আমরা বুঝি। দেশ গঠনের এ কাজে অংশীদার হতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তার এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে ইডটকো গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’র ডিরেক্টর আইআর কুমারী নলিনী বলেন, “পরিবেশের উপর আমাদের প্রভাব কমানোর করার পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব টেকসই অবকাঠামো তৈরিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুলত আমাদের টাওয়ারগুলো জাতীয় গ্রিডকেই শক্তির মূল উৎস হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু যেসব দেশে এটি একটি চ্যালেঞ্জ, সেইসব দেশের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তি অত্যন্ত কার্যকর একটি সল্যুশন এবং এই হাইব্রিড সল্যুশনটিকে কাজে লাগানোর জন্য যেসব দেশে আমাদের কার্যক্রম আছে, ওইসব দেশের বিভিন্ন অংশীদারদের সাথে একত্রে কাজ করে থাকি।
তিনি বলেন, গত বছর মিয়ানমারে আমরা একই ধরনের একটি সল্যুশন তৈরি করেছিলাম। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত সল্যুশন হাতিয়াতে স্থাপন করেছে। বিগত বছরগুলোতে ইডটকোর বেশকিছু উদ্ভাবনী সল্যুশনের প্রথম পথাচলার আবাস্থল ছিল বাংলাদেশ। এদেশের জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই এখানকার মানুষের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন ও স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে বর্তমানে নিজস্ব মালিকানার দশ হাজারেরও বেশি শেয়ারযোগ্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো পরিচালনা করছে ইডটকো বাংলাদেশ। টেকসই ও শেয়ারযোগ্য অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধারাবাহিক বিনিয়োগের পাশাপাশি উদ্ভাবন প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইডটকো এশিয়ার প্রথম আঞ্চলিক এবং সমন্বিত টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যা টাওয়ার সেবা খাতে টাওয়ার লিজিং, কো-লোকেশন্স, বিল্ড-টু-স্যুট, এনার্জি, ট্রান্সমিশন এবং অপারেশন্স এন্ড মেইন্ট্যানেন্স (ও এন্ড এম) বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। ইডটকো বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানে ৩১,৮২০এরও বেশি টাওয়ার পরিচালনা করে; যার মধ্যে ইডটকো সরাসরি ২০,২৩০ এবং অন্যান্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাকি ১১,৫০০ টাওয়ার পরিচালনা করে। টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো এবং সলিউশনের ক্ষেত্রে ইডটকো আশাতীত সেবাদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। এর অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী পর্যবেক্ষণ সেবা ইডটকো এরই মধ্যে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর জন্য ব্যাটারি, শক্তি এবং জ্বালানি সাশ্রয়ে কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখেছে। ইডটকো গ্রুপ সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসায়িক অগ্রগতিতে সর্বোচ্চ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধারে ২০১৯ সালে ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভান ও এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমস টাওয়ার কোম্পানি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।