সাইবার অপরাধ দমনে এক অন্যরকম যোদ্ধা

মাহমুদ সালেহীন খান
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২১, ১৩:২৮

ফাইল ছবি
সাইবার জগতে কিশোর-কিশোরীদের নিরাপদ বিচরণ বা জ্ঞানের দুনিয়ায় উঁকি দেওয়ার সুযোগ বিবর্ণ হয়ে পড়ে কিছু অপরাধীর দুষ্কর্মের কারণে। ইন্টারনেট মাধ্যমে ভূঁয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে নানাভাবে কিশোর/কিশোরী কিংবা নারীদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সেরকম একটি পরিস্থিতিতে সাইবার বুলিং ঠেকাতে ১৭ বছর বয়সী বাংলাদেশী তরুণ সাদাত সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। তার উদ্ভাবিত ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আলো ছড়াচ্ছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে। এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের জন্য তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। নেদারল্যান্ডকেন্দ্রিক সংগঠন কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন সাদাত রহমানকে একজন ‘তরুণ চেঞ্জমেকার’ এবং ‘সমাজ সংস্কারক’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাত রহমানকে নিয়ে লিখেছেন মাহমুদ সালেহীন খান।
সাদাত রহমানের পৈতৃক নিবাস মাগুরা জেলার সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. সাখাওয়াত হোসেন, যিনি পেশায় একজন ডেপুটি পোস্টমাস্টার এবং মায়ের নাম মলিনা খাতুন। বাবার চাকরির সুবাদে ২০১৭ সালে তিনি নড়াইল শহরে আসেন এবং নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই সময় তিনি ‘নড়াইল ভলান্টিয়ার্স’ নামক এক সংগঠন গড়ে তোলেন। নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে তিনি নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘নড়াইল ভলান্টিয়ার্স’ সংগঠনের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর সাইবার টিনস নামক এক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের যাত্রা শুরু হয়। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই তিনি এখন বিশ্ব জয় করেন।
টিনএজাররা অনলাইনে কোনো ধরনের ক্ষতির কিংবা অপরাধের (সাইবার বুলিং) শিকার হলে যেন তা জানাতে পারে সে লক্ষ্যে এই মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে পুরস্কারটি জয় করেন নড়াইলের ছেলে সাদাত রহমান। এ পুরস্কার জয়ীদের তালিকায় রয়েছেন পাকিস্তানে মেয়েদের শিক্ষার জন্য লড়াকু হিসেবে বিশ্বখ্যাত মালালা ইউসুফ জাইসহ পরিবেশ আন্দোলনে বিশ্ব পরিচিত গ্রেটা থানবার্গ। এবার সে তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের সাদাত। এর আগে সাদাত রহমান বাংলাদেশে তরুণদের জন্য ঘোষিত পুরস্কার জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। নড়াইলে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অনন্য অবদানের জন্য এই পুরস্কারে ভূষিত হয় সাদাত রহমান।
নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই সাদাত রহমানকে তরুণদের জন্য ‘অনুপ্রেরণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার এমন একটি বার্ষিক পুরস্কার, যা শিশুদের অধিকারের কথা প্রচার করে এবং তরুণদের কাজকে স্বীকৃতি দেয়। সাদাত রহমান পুরস্কার হিসেবে পাওয়া এক লাখ ১৮ হাজার ডলার তার দেশে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন।
সাদাত রহমানের তৈরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইবার বুলিং বা অনলাইনে হুমকি ও হয়রানিমূলক আচরণ সম্পর্কে তরুণদের শেখানো হয়। সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়ে বাংলাদেশে ১৫ বছরের এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পেরে এই অ্যাপ বানাতে অনুপ্রাণিত হন তিনি। তরুণ বয়সীরা এই অ্যাপের মাধ্যমে তাদের সাথে হওয়া অনলাইন হয়রানির অভিযোগও জানাতে পারেন। সাদাত রহমানের জেলার প্রায় ১,৮০০ কিশোর এখন অ্যাপটি ব্যবহার করছে বলে জানা যায়।
সাদাত রহমানের অ্যাপ্লিকেশন সাইবার টিনসের মাধ্যমে তরুণরা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবী একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গোপনে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ দায়ের করতে পারে। এই অ্যাপটি চালু হওয়ার পর অনলাইনে হয়রানির শিকার তিন শতাধিক তরুণ সহায়তা পেয়েছে। সাদাত জানান, বাংলাদেশের অর্ধেক তরুণ বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন; কিন্তু ভয় এবং জ্ঞানের অভাব থাকায় তাদের অনেকেই এসব ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জানাননি।
তিনি আরও বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সচেতনতা, সহানুভূতি, কাউন্সেলিং এবং যথাসময়ে পদক্ষেপ-এই চারটি বিষয় হল সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চালক শক্তি। সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটা যুদ্ধের মতো এবং এই যুদ্ধে আমিও একজন যোদ্ধা। যদি সবাই আমাকে সমর্থন করে যায়, তবে একসঙ্গে আমরা সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জয়ী হব।
অ্যাপটিতে কীভাবে টিনেজাররা এ ধরনের অপরাধীদের থেকে মুক্ত থাকতে পারবে তার টিপসও দেওয়া রয়েছে। এ পর্যন্ত এই অ্যাপটি ১৮০০ বার ডাউনলোড হয়েছে। আর সাদাত এবং তার দল অন্তত ৬০ জনকে তাদের সহায়তা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান এখন বড় পরিসরে কাজ করতে চান সাইবার অপরাধ নিয়ে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের রঙিন জগতে কিশোর-কিশোরীদের নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে সহযোগিতা চান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার। সফলতার পেছনের গল্প বলেছেন সম্ভাবনাময় সাদাত। সফলতার এই পথে তাকে উৎসাহ জোগানো সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করা এই সাইবার যোদ্ধা।
সাইবার বুলিংয়ে কাজের শুরু সম্পর্কে সাদাত জানান, একটি প্রবাদ আছে, প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ উদ্ভাবন করে। সাইবার বুলিং ঠেকানোর শুরুটা হয়েছিল একটা রোমহর্ষক ঘটনা দিয়ে। পিরোজপুরে একটি মেয়ে সুইসাইড করলো সাইবার বুলিংয়ের কারণে। সে কাউকে বলতে পারল না, তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার কথা। তার আত্মহত্যার ব্যাপারটি জানার পর আমার মনে নাড়া দিয়েছিল। সেই থেকে যাত্রা শুরু। মনে করলাম, আমার জেলায় এ রকম বিপদে পড়ে অনেক কিশোর-কিশোরী এমন কিছুর মুখোমুখি হচ্ছে সাইবার অপরাধ জগতে। আমার বন্ধু কয়েকজনকে নিয়ে ‘সাইবার টিনস’ নামের একটি অ্যাপ প্লে স্টোরে রিলিজ করলাম। এর পেছনে আমার, আমাদের অনেক ত্যাগ, সাধনা দীর্ঘ পরিশ্রম ছিল। সাইবার টিনসের কার্যক্রম শুধু অ্যাপসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ আছে। আমি আসলে মোটেই প্রফেশনাল নই। তবুও নিজে যতটুকু পেরেছি, সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ খুব অল্প সময়েই হাজার হাজার কিশোর-কিশোরী এ অ্যাপের সুফল পাওয়া শুরু করলো।
সাইবার টিনসের কার্যকারিতা সম্পর্কে সাদাত জানান, সাইবার টিনস মূলত একটি প্ল্যাটফর্ম। এর একটি অ্যাপ ও সাইট আছে। সঙ্গে ফ্যান পেজও রেখেছি। যেখানে ১৩-১৯ বছরের কিশোর-কিশোরী, যারা নড়াইলে থাকেন; তারা যদি অনলাইনে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন, সেটা বেসিক পর্যায়ে হতে পারে বা ক্রাইম পর্যায়ে হতে পারে। যেমন বেসিক পর্যায়ে যদি আইসিটি ইস্যু হয়- ভুক্তভোগীর নামে ফেইক আইডি খোলা, আইডি হ্যাক হয়ে যাওয়া বা আইডিতে কোনো সমস্যা হয়; সেগুলো আমাদের জানালে আমরা সাইবার অভিজ্ঞদের মাধ্যমে সমাধান করি। আর যদি দেখি যে এখন সিকিউরিটি রিলেটেড কোনো ইস্যু নেই, আছে ক্রাইম রিলেটেড ইস্যু, তাও মারাত্মকভাবে-তখন আমরা সেটির জন্য সরাসরি পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করি। এতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিশোর-কিশোরীরা অনেকে থাকে, সেখান থেকে সরাসরি পুলিশি সাপোর্ট পেয়ে যায়।
তিনি বলেন, একজন ভিকটিম যখন আমাদের ‘সাইবার টিনস’ এ অভিযোগ করবে তখন আমরা কিশোর-কিশোরীদের গুরুত্ব কেন দেব? কারণ তারা হচ্ছে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। এটি নিয়ে যাদের ভাবার কথা তারা যদি সবাই মিলে ভাবে, তাহলে কিশোর-কিশোরীরা ডিজিটাল সার্ভিসগুলো সচেতনভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান সিআরআইর যুব সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি ইয়ং বাংলা প্ল্যাটফর্মে ২০১৮ সালে বিজয়ী হয়েছিলেন এই সাদাত। সেই অনুপ্রেরণায় এতটা পথ তিনি মাড়িয়ে এলেন, জানালেন অকপটে। বললেন, সিআরআইর উদ্যোগ খুব বড় একটি ব্যাপার।
সাদাত বলেন, বাবার চাকরির সুবাদে কয়েক বছর আগে সাতক্ষীরা থেকে এসে নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমি একটু ডানপিটে এবং জেদী স্বভাবের; চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। এই সাফল্যের পেছনে আমার পরিবার, ক্রিকেটার মাশরাফি ভাই তার সহধর্মিণী সুমি আপু, নড়াইলের ডিসি আনজুমান আরা, পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন স্যারের অনেক অবদান আছে। মাশরাফি ভাই সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন।
তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেন, সারাবিশ্বে কয়জন বিল গেটস, কয়জন মাশরাফি হতে পারে? এভাবে না বলে আমাদের বলুন, তুমিও হতে পারো বিল গেটস, মাশরাফি।
টিনএজরা যখন সাইবার ক্রাইমের শিকার হন তখন তারা সব জায়গা থেকে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। অপরাধ না করেও তাদের জীবন দিতে হয়। থানায় অভিযোগ জানিয়েও সব সময় প্রতিকার পায় না। বাংলাদেশের একটি ছোট জেলা নড়াইলে বসে আইসিটি বেইজড কাজ করে বিশ্ব জয় করা থেকেই বোঝা যায় ডিজিটাল দেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, সত্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের রোল মডেল। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সাদাত জানান, ভবিষ্যতে সাইবার বুলিং ঠেকাতে আমাদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। পুরস্কারের সঙ্গে পাওয়া এক লাখ ইউরো দিয়ে শিশুদের সাইবার ক্রাইম থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করছি। যশোরের আইটি পার্কে একটি প্রধান অফিস স্থাপন করবো এবং ঢাকা ও নড়াইলের অফিসে কার্যক্রম আরও বেগবান হচ্ছে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা, চাইল্ড ফ্রেন্ডলি একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া। এ ছাড়া নিজেরা যতটুকু জানতাম তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে ছিলাম। ভবিষ্যতে বিশেষজ্ঞ ও পেশাদারদের সঙ্গে গবেষণা আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে আরও ভালো করা যায় সেদিকে এগিয়ে যেতে চাই এবং একটি পেশাদারি অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। ইতিমধ্যে ওয়েবসিরিজ করার পরিকল্পনা করছি, প্রতিটি স্কুল-কলেজে সাইবার বুলিং সচেতনতা নিশ্চিত করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন সাইবার বুলিং সচেতনতা সংক্রান্ত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। আমরা মূলত তরুণ প্রজন্ম নিয়েই কাজ করার পরিকল্পনা করছি। আমি সেদিনই সফল হবো যেদিন আর কেউ অ্যাপটি ইন্সটল করবে না এবং কারও সাইবার বুলিং নিয়ে অভিযোগ থাকবে না।
করোনাভাইরাসকালে যেহেতু শিশুরা ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটায়, তাই তাদের নিরাপদ করার কাজ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। আমি একজন ব্যাক বেঞ্চার স্টুডেন্ট, কিন্তু নিজেকে একজন ক্রিয়েটিভ মানুষ হিসেবে গড়তে চেয়েছি। আমার মেধা এবং স্বপ্ন অনুসারে কাজ করেছি। পুরস্কারের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ আমার আজীবনের পড়াখেলার দায়িত্ব নিয়েছেন, বিদেশের স্কলারশিপ করার সুযোগ করে দেবেন। আসুন সকলে টিনএজারদেরকে তাদের মেধা ও সামর্থ্য অনুসারে বড় হতে দেই, বলেন তিনি।
বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ দমনকে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন সাদাত। তিনি জানালেন, এটা আসলেই কঠিন। কারণ নিজের নিরাপত্তা নেই। সাইবার টিনসের মাধ্যমে অপরাধী গ্রেফতার থেকে শুরু করে সন্দেহভাজনদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আসছে প্রতিনিয়ত, তা কিন্তু একান্ত আমার কারণেই। তারা সবাই জানে সাইবার টিনসটা কার নিয়ন্ত্রণে। কোন ছেলেরা এগুলো করছে বা কোন মেয়েরা এগুলো করছে। এটা আসলে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ সিকিউরিটির ব্যাপারে আমার জীবন ঝুঁকিতে থাকত। তারপরও আল্লাহর রহমতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি।
বিড়ম্বনায় প্রসঙ্গে সাদাত বলেন, দেখা যায় সাইবার বুলিং বা ইন্টারন্যাশনাল বিষয়ে লোকাল পুলিশ প্রশাসন অনেক কম জানেন। ফলে কাজ করাটা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। আবার আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করা ঝামেলা। সে কারণে চেষ্টা করেছি সচেতন করতে। তবে টেকনিক্যালি যখন দেখি যে আর কোনো উপায় নেই, তখন আমরা পুলিশের কাছে যাই।
কারণ একটা টিনএজারকে হঠাৎ করে পুলিশের কাছে দিয়ে দিলাম; পুলিশের যে একটা প্রসেস আছে, হয়তো বা আমাদের কাছে থেকে এখন জিডি নিচ্ছে না। কিন্তু আলটিমেটলি গ্রেফতারের পর জিডি বা আইনি প্রক্রিয়াগুলো করতে হচ্ছে। তো টিনএজারের জন্য এগুলো একটু ঝামেলার ব্যাপার হয়ে যায়। সেজন্য আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি কীভাবে টেকনিক্যালি এর সমাধানের উপায় বের করা যায়।
দেশে প্রথমবারের মতো শিশু শান্তি পুরস্কার অর্জন সম্পর্কে সাদাত রহমান বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখন দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেছে। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বীকৃতি পেয়েছি, সেক্ষেত্রে শুধু দেশেরই নয় বরং সারাবিশ্বের সাইবার বুলিং প্রতিরোধের দায়িত্ব চলে এসেছে আমার ওপর। এ দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পারলেই স্বার্থক মনে করব। আসলে আমার কাছে সবকিছু ছিল এক কথায় স্বপ্নের মতো।