যেভাবে ৬০ কোটি ডলার চুরি করল হ্যাকাররা

প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২১, ২৩:৩৪

প্রতীকী ছবি
ক্রিপ্টোকারেন্সি টোকেন লেনদেন প্লাটফর্ম পলি নেটওয়ার্ক থেকে ৬১ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। যা ক্রিপ্টোকারেন্সি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনা।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে পলি নেটওয়ার্কের নাম তেমন পরিচিত নয়। তাদের কাজটি মূলত বিভিন্ন ব্লকচেইনের মধ্যে ব্যবহারকারীদেরকে টোকেন স্থানান্তরের সুযোগ করে দেয়া। এই ঘটনা এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রান্সফারিং সংস্থাটিকে এখন সামনে নিয়ে এসেছে।
গত মঙ্গলবার তাদের প্লাটফর্মটিরই একটি দুর্বলতার সুযোগে ৬১.৩ কোটি ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটা পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়ে ফেলে হ্যাকাররা। অবশ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চুরির ২৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ডিজিটাল মুদ্রা তারা ফেরতও দিয়েছে বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে।
পলি নেটওয়ার্ক কারা চালায় প্রাথমিকভাবে অবশ্য তা জানা যায়নি। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক ওয়েবসাইট কয়েনডেস্কের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চীনের ব্লকচেইন উদ্যোগ নিও এর প্রতিষ্ঠাতারাই এটি চালু করেন। কীভাবে চুরির ঘটনা ঘটল, তা জানার চেষ্টা চলছে।
পলি নেটওয়ার্ক একটি বিকেন্দ্রীকৃত আর্থিক (ডিইএফআই) প্ল্যাটফরম যা ক্রিপ্টোকারেন্সির সবচেয়ে বড় লেনদেন প্লাটফর্মগুলোর একটি বাইন্যান্স স্মার্ট চেইন নেটওয়ার্কের ইথেরিয়াম ও পলিগন ব্লকচেইন নির্ভর। যার উপর ভিত্তি করেই এই ডিজিটাল মুদ্রার লেনদেন হয়।
পলিনেটওয়ার্কের একটি স্মার্ট কনট্রাক্টে বিশাল পরিমাণ তারল্য ছিল। হ্যাকারদের নজর পড়ে সেখানে। পলি নেটওয়ার্ক টুইটে জানিয়েছে, হ্যাকাররা এই স্মার্ট কনট্রাক্ট এর একটি দুর্বলতা ধরে সিস্টেমে ঢুকে পড়ে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
হ্যাকাররা তিনটি ব্লকচেইনে ঢুকে লেনদেনের নির্দেশনাগুলো পাল্টে দেয় ও এই অর্থ তিনটি ওয়ালেট ঠিকানায় স্থানান্তর করে বলে ধারণা। ব্লকচেইন ফরেনসিক কোম্পানি চায়নালাইসিসের তথ্য অনুযায়ী হ্যাকাররা ১২টি ভিন্ন ভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে অর্থ সরিয়েছে।
কয়েনডেস্কের তথ্য অনুযায়ী হ্যাকাররা তিনটি ওয়ালেট থেকে অর্থগুলো কার্ভডট ডট এফআই নামের একটি ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেনকারী প্লাটফর্মে বা লিকুইডিটি পুলে সরাতে চেষ্টা করে। তবে এতে তারা সক্ষম না হলেও ১০ কোটি ডলার ইলিপসিস ফাইন্যান্স নামের একটি ‘লিকুইডিটি পুলে’ সরিয়ে ফেলে।
এই হ্যাকিংয়ের পেছনে কারা জড়িত বিশ্লেষণকারীরা তার কোন কূলকিনারা করতে পারেনি। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন নজরে রাখা কয়েকটি ওয়েবসাইটে একজন কথিত হ্যাকারের ডিজিটাল বার্তা প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন মজা করতে ও সিস্টেমের দুর্বলতা দেখিয়ে দেয়ার জন্যই এই কাজ করেছেন। অর্থের প্রতি আগ্রহ নেই এমন কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, টোকেনগুলো ফিরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা তার আগে থেকেই ছিল।
কথিত এই হ্যাকারের ডিজিটাল বার্তাটি প্রকাশ করেছে এলিপটিক ও চায়নালাইসিস। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের পক্ষে আলাদাভাবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কীভাবে এই চুরির ঘটনা ঘটলো তা জানার চেষ্টা করছে তারা।