গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ‘রিং আইডি’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:২৩

ছবি- সংগ্রহীত
নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসার ধরন যেমন বদলাচ্ছে, তেমনি গতি পাচ্ছে আর্থিক লেনদেনেও। এমনই একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র ই-কমার্স। যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। আধুনিক এই ইলেকট্রনিক কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে বাণিজ্য কাজ পরিচালনা করে। দিনদিন এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
জনপ্রিয়তার আড়ালে একশ্রেণির অসাধু চক্র এর অপব্যবহারেরও সুযোগ নিচ্ছে। নানা অফার দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমনই একটি মাধ্যম হলো ‘রিং আইডি’। সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে বিনিয়োগ করে অনেক গ্রাহক এখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
আইডি খোলার নাম করে এবং আয়ের নানা প্রলোভন দেখিয়ে রিং আইডি গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বেশি মুনাফার আশায় এখানে বিনিয়োগ করছেন গ্রাহকরা। কিন্তু বিনিয়োগ করেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
রিং আইডির কয়েকজন গ্রাহক জানান, ‘গোল্ড মেম্বারশিপ’ কেনার জন্য এক মাস আগে ২২ হাজার টাকা করে পেমেন্ট করেন তারা। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাও কেটে নেয়া হয়। কিন্তু তাদের আইডি এখনও অ্যাকটিভ হয়নি । এ বিষয়ে তাদের সাথে জায়গায় যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। এভাবে মেম্বারশিপের নামে শতশত গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রিং আইডি।
শুধু জবস মেম্বারশিপ দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। মেম্বারশিপ দিয়েও নানা ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। এমন একটি সিস্টেম হলো ক্যাশ আউট। নিজের জমানো টাকা উঠাতে পারছেন না গ্রাহকরা। বিভিন্নভাবে এজেন্টের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি প্যাকেজ অফার রয়েছে। সিলভার মেম্বারশিপ ও গোল্ড মেম্বারশিপ। সিলভার মেম্বারশিপের মূল্য ১২ হাজার টাকা এবং গোল্ড মেম্বারশিপের মূল্য ২২ হাজার টাকা। পাশাপাশি আরো দুইটি প্রবাসী প্যাকেজ রয়েছে। প্রবাসী গোল্ড ২৫ হাজার টাকা এবং প্রবাসী প্লাটিনাম ৫০ হাজার টাকা।
মেম্বারশিপ পাওয়ার পরই গ্রাহকদের আইডিতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। ওই বিজ্ঞাপন গ্রাহক যত দেখেন ততই ইনকাম। এভাবে রিং আইডি কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপের সিলভার প্যাকেজ থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং প্রতি মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা, গোল্ড মেম্বারশিপ থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া প্রবাসী গোল্ড মেম্বারশিপ থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা, প্রবাসী প্লাটিনাম প্যাকেজ থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ আছে বলে অফার দেয় রিং আইডি।
এমন লোভনীয় অফার দেখে সেখানে বিনিয়োগ করলেও অনেক গ্রাহক হারাচ্ছেন তাদের কষ্টার্জিত পুঁজি।
রিং আইডির জবস মেম্বারশিপ থেকে বিকাশ, রকেট ও নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ দিন পরপর কমপক্ষে ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করা যাবে বলে বলা হয়। আর এজেন্টদের মাধ্যমে পেমেন্ট রিকোয়েস্ট দিয়ে এক থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা পাওয়া যাবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু সপ্তাহপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তোলার সুযোগ দিলেও কয়েকদিন পর রিং আইডি তা কমিয়ে দেয়। একসময় তারা ক্যাশ আউট অপশনই বাতিল করে দেয়। পরে তাদের অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যেই অনলাইন শপে জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু তাদের অনলাইন শপে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজেন্ট পেমেন্ট দেয়ার নিয়ম থাকলেও মাসের পর মাস ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক।
এভাবেই গ্রাহকের কাছ থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে রিং আইডি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম রিং আইডি। যা কানাডার মন্ট্রিয়াল সিটিতে অবস্থিত ‘রিং ইনকরপোরেশন’ থেকে পরিচালিত। এর আইডি ব্যবহারকারীরা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। এ প্লাটফর্মে বিনামূল্যে কল, মেসেজ, স্টিকার, গোপন চ্যাট (সিক্রেট চ্যাট) করার সুযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে প্রাথমিক সংস্করণ সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি।
তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট- www.ringid.com
এটির প্রতিষ্ঠাতা কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিন ইসলাম ও শরিফ ইসলাম। এটি বাংলাদেশি কোম্পানি বলে দাবি করা হলেও প্রতিষ্ঠাতারা দেশের বাইরে থাকেন বলে জানা গেছে।
দেশের বাইরে থাকায় রিং আইডিতে বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগে মূল্য না দিয়ে পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। বলা হয়েছে, ঢাকার ভেতরে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাত হাজারের মতো অনলাইন শপ রয়েছে। কিন্তু এ সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা নেই। নামসর্বস্ব নীতিমালা দিয়ে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন কোম্পানি। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। অনিয়ন্ত্রিত এসব ই-কমার্সের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। কারণ, তাদের গ্রেপ্তার বা জেলহাজতে পাঠানো হলেও গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।