
প্রতীকী ছবি
বর্তমান যুগে মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যে বিষয়টি জড়িয়ে আছে তার নাম ইন্টারনেট। সেই ইন্টারনেটের বড় একটি অংশই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা সংক্ষেপে ওয়েব। তথ্য সংগ্রহ, পড়াশোনা, বিনোদন, ব্যবসায়িক কাজ, আর্থিক লেনদেন, সবকিছুতেই রয়েছে এর ব্যবহার।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব
হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হাইপারমিডিয়াকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বলে। বিশ্বের বিভিন্ন সার্ভারে ছড়িয়ে থাকা তথ্য ইন্টারনেটের সহায়তায় নিজেদের মাঝে সংযুক্ত করে তৈরি করা একটি তথ্যভাণ্ডারই ওয়েব। এটি ইন্টারনেটে সর্বাধিক ব্যবহৃত পরিষেবা। মূলত এর মাধ্যমে অনেক সার্ভার ব্যবহারকারী ও ক্লায়েন্ট একসঙ্গে যোগদান করে। বিভিন্ন ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে হাইপার লিঙ্কের সাহায্যে ওয়েব পেজগুলো দেখা যায়, যেখানে বিভিন্ন তথ্য যথা- টেক্সট, ভিডিও, চিত্রসহ অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া থাকে। একজন ব্যবহারকারী ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে এসব তথ্যে প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে।
উদ্ভাবনের কারিগর
কয়েক দশক আগেও যেখানে সামান্য তথ্যের জন্য মানুষ গলদ্ঘর্ম হতো, তা এখন অনায়সেই হাসিল করা সম্ভব হয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের কারণে। এই অভাবনীয় উদ্ভাবনের পেছনের কারিগর টিম বার্নাস লি। টিম জন্মগ্রহণ করেন লন্ডনে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক পাস করে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার সার্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই টিমের মনে প্রথম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের চিন্তা আসে।
সার্নে কাজ করার সময় টিম দেখলেন গবেষণা কাজ করার জন্য প্রত্যেক গবেষকের ব্যবহৃত কম্পিউটারে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে; কিন্তু তাদের সেই তথ্য একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো কোনো আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থাপনা নেই। তথ্য আদান-প্রদানের এই ঝামেলা এড়াতেই টিম হাইপারটেক্সট উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
জালের ন্যায় ছড়িয়ে থাকা নেটওয়ার্ক
১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে টিম সর্বপ্রথম সার্নের নিকট একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন, যার নাম ছিল ‘ইনফর্মেশন ম্যানেজমেন্ট : আ প্রপোজাল’। এই প্রস্তাবনায় তিনি বিশ্বব্যাপী জালের ন্যায় ছড়িয়ে থাকা একটি নেটওয়ার্কে কথা উল্লেখ করেন, যার নামকরণ করেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব।
অবাক করা বিষয় হলো, টিমের বস এই যুগান্তকারী প্রস্তাবনাটি প্রথমেই অস্পষ্ট বলে উড়িয়ে দেন। তবে তাতে মোটেও দমে যাননি টিম। বসের অনুমোদন ঠিকই আদায় করে ছাড়েন তিনি।
পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে টিম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নিয়ে কাজ করা শুরু করেন এবং তার পরিকল্পনা অনুসারে সার্নে ১৯৯১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ওয়েবসাইট উন্মুক্ত হয়। টিম অনুধাবন করেন এই অভাবনীয় সাফল্য তখনই মানুষের উপকারে আসবে, যখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব পৃথিবীর সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত অর্থাৎ ফ্রি করে দেওয়া হবে। সার্নের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করে টিম ওয়েবের কোডটি রয়্যালটি ফ্রি করেন। ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে এই ঘোষণাটি দেওয়া হয়।
এরপর থেকেই শুরু হয় ওয়েবের স্বর্ণযুগ। বর্তমানে আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে প্রতি ৫ জনের মাঝে ৩ জনই ওয়েব ব্রাউজ করেন।