Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সন্তান জন্ম দিল রোবট!

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:২৪

সন্তান জন্ম দিল রোবট!

জেনোপাস লেভিস

বিশেষ এক ধরনের ব্যাঙের কোষ নতুন ধরনের প্রাণ তৈরি করেছে। অতি ক্ষুদ্র এই জীবসত্তা (অর্গানিজম) ক্ষুদ্র থালায় সাঁতার কাটতে পারে, নতুন একক কোষ খুঁজে বের করতে পারে ও এক সাথে শত শত একত্রিত হতে সক্ষম। আফ্রিকার এক ধরনের ব্যাঙ (জেনোপাস লেভিস)-এর স্টেম কোষ ব্যবহার করে এটিকে তৈরি করা হয়। 

২০২০ সালের প্রথম দিকে এমন এক বিরল ‘জীবনকে’ গবেষণাগারে তৈরি করেছিলেন আমেরিকার ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। আফ্রিকার এক ধরনের ব্যাঙ (জেনোপাস লেভিস)-এর স্টেম কোষ ব্যবহার করে এটিকে তৈরি করা হয়েছিল। তাই তার থেকে তৈরি যন্ত্রটির নাম ‘জেনোবট’। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর প্রথম ‘জ্যান্ত রোবট’। ১ মিলিমিটারের থেকেও ক্ষুদ্র যন্ত্রটি মানুষের শরীরের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। সেখানে নির্বিঘ্নে হেঁটে-চলে-সাঁতরে বেড়াতে পারে। বিনা খাবারে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাঁচতে পারে। এবং মানবদেহের অন্দরে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যেতে পারে। কোনোভাবে জখম হলে, নিজেই নিজের ক্ষত সারাতে পারে।

ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয় জানান, ‘‘সম্পূর্ণ নতুন একটি জীবন।’’ ২০২০-র আবিষ্কারের প্রায় দু’বছরের মাথায় এবার আরো একটি সুখবর দিলেন আমেরিকান বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি তাঁরা জানালেন, জীবন্ত-রোবটগুলো সন্তানের জন্মও দিতে পারে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত রয়েছে আমেরিকার আরো দুই বিশ্ববিদ্যালয়, টাফ্টস এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েস ইনস্টিটিউট। এই গবেষণাকে তারা বলছে, ‘বায়োলজিক্যালি ইনস্পায়ারড ইঞ্জিনিয়ারিং’। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জেনোবটের প্রজনন ক্ষমতা একেবারে ভিন্ন। প্রাণী বা উদ্ভিদ জগতে যেভাবে প্রজনন হয়, এর সাথে তার কোনো মিল নেই।

এই গবেষণার অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় থাকা বিজ্ঞানী, টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেন ডিসকভারি সেন্টারের ডিরেক্টর, তথা জীববিশেষজ্ঞ মাইকেল লেভিন বলেন, ‘‘আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ব্যাঙের একটি নিজস্ব প্রজনন ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তার কোষগুলোকে যখন ভ্রূণ থেকে আলাদা করা হয়েছে, একটি নতুন পরিবেশে নিজেদের মতো বাঁচার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তারা শুধু নিজেদের মতো চলার রাস্তা খুঁজে নেয়নি, প্রজননের পথও বার করে নিয়েছে’’

স্টেম কোষ জীবদেহের এক ধরনের বিশেষ কোষ। এদের নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতা থাকে। জেনোবট তৈরিতে ব্যাঙের ভ্রূণ থেকে স্টেম কোষগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোকে ইনকিউবেট (কোনো উষ্ণ জায়গায় রেখে প্রাণ সঞ্চারিত হতে সাহায্য করা) করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে কোনো রকম জিন পরিবর্তন ঘটানো হয়নি।

কিন্তু এটি কি জীবন্ত রোবট নাকি নতুন জীব? জবাবে বলা হয়- দুটোই। বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও রোবোটিক্সের অধ্যাপক জশ বোনগার্ড। তিনি বলেন, ‘‘রোবট শুনলেই বেশিরভাগ লোক মনে করেন, ধাতু বা সেরামিকস দিয়ে তৈরি কিছু। কিন্তু রোবটের অর্থ সেটা নয়। রোবট হল এমন কিছু, যা মানুষের হয়ে নিজের মতো কাজ করে যেতে পারে।’’ বোনগার্ডের কথায়, ‘‘এটা রোবটই। তবে হ্যাঁ, এটি একটি জীবও। ব্যাঙের কোষ থেকে কোনো রকম জিনগত পরিবর্তন না ঘটিয়ে এটিকে তৈরি করা হয়েছে। এটি চিরাচরি ভাবে চেনা রোবট নয়, আবার কোনো নতুন প্রাণীর প্রজাতিও নয়। নতুন ধরনের আর্টিফ্যাক্টস। বলা যায়, জীবন্ত, নিয়ন্ত্রণযোগ্য জীব।’’

এক মিলিমিটারেরও কম, ০.০৪ ইঞ্চি মাপের জেনোবটের একটি নির্দিষ্ট দৈহিক গঠন আছে। সুপার কম্পিউটারের সাহায্যে সেই গঠন তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এমন একটি আকার এদের দেয়া হয়েছে, যা জীবজগতে আগে ছিলো না।

প্রশ্ন হল, মানুষের হয়ে কোন কাজটা করে দেবে ০.০৪ ইঞ্চির জেনোবোটরা? এদের কাজ কি? বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিপুল কর্মকাণ্ড। সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা হবে এদের। কীভাবে, তা অবশ্য ভাঙেননি কেউ। উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই গবেষণায় অর্থ ঢেলেছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

এছাড়া, চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে একে। মানুষের শরীরের ভিতরে এর সাহায্যে ওষুধ পাঠানো হবে। ধমনীতে রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি হলে, তা সারাতে সাহায্য করবে। এছাড়া, সেল বায়োলজির গবেষণাতেও সাহায্য করবে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পরিষ্কার বা সমুদ্র থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক সংগ্রহের মতো কাজও নিমেষে করে ফেলবে ‘জীবন্ত রোবট’।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫