Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

চেনা বিশ্বকে বদলে দেবে মেটাভার্স

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:১৩

চেনা বিশ্বকে বদলে দেবে মেটাভার্স

ছবি: সংগৃহীত

এমন এক বিশ্বের কথা ভেবে দেখুন যেখানে আপনার সশরীরের উপস্থিত হওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই, আপনার ভার্চুয়াল থ্রিডি মডেলেই প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পন্ন করবে।

মনে করুন আপনি একটি বাড়ি কিনবেন। আপনি ভার্চুয়াল মার্কেটে গেলেন এবং সেখানে ভবনের অপশনগুলোতে গিয়ে পছন্দের বাড়িটি নির্বাচন করে আপনার থ্রিডি মডেলের মাধ্যমে পুরো বাড়িটি ঘুরে দেখতে পারবেন। অথবা ঘরে বসে অনলাইন শপিং করার সময় একটি পোশাক পছন্দ হলো ওই পোশাকের একটি ডিজিটাল সংস্করণ গায়ে দিয়ে দেখার পরই আপনি জামাটি কেনার জন্য অর্ডার দিলেন। বিষয়টা হয়তো বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর মতো মনে হচ্ছে; কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখন আর সেটা কল্পনার পর্যায়ে থাকছে না। এরকম এক প্রযুক্তি তৈরির কাজ এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

এই প্রযুক্তির ফলে অনলাইনের ভার্চুয়াল জগৎকে মনে হবে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর মতো।

ধরা যাক আপনার একজন বন্ধু সিলেটের চা বাগানে বেড়াতে যাওয়ার অপূর্ব কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ফেসবুক দেখার সময় এই প্রযুক্তির কারণে মনে হবে আপনিও সেখানে উপস্থিত আছেন। আর যে প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব সম্ভব হবে তার নাম মেটাভার্স।

মেটাভার্স কী : বলা হচ্ছে, মেটাভার্সই ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগৎকে মনে হবে বাস্তব জগতের মতো যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। এটাকে থ্রিডি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড। স্ক্রিনে এখনকার বেশিরভাগ স্পেস হচ্ছে টু-ডি বা দ্বিমাত্রিক; কিন্তু মেটাভার্স জগতে আমাদের অভিজ্ঞতা হবে থ্রিডির মতো। টেলিফোনে কারও সঙ্গে কথা বললে মনে হবে সামনা-সামনি আলাপ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে মেটাভার্স প্রযুক্তিকে আপাতত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআরের কোনো সংস্করণ বলে মনে হতে পারে; কিন্তু এটি আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি।

প্রযুক্তিবিদরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে মেটাভার্সের তুলনা হিসেবে আজকের দিনের স্মার্ট- ফোনের সঙ্গে আশির দশকের মোবাইল ফোনের তুলনা করে থাকেন।

বর্তমানে ভিআর বেশিভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন গেমিং-এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু মেটাভার্সের ব্যবহার হবে সকল বিষয়ে- অফিসের কাজ থেকে শুরু করে খেলাধুলা, সিনেমা, কনসার্ট, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার বেলাতেও।

নিজের প্রতিরূপ থ্রিডি মডেল : মেটাভার্স প্রযুক্তিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘শেয়ার্ড ভার্চুয়াল পরিবেশে’ প্রবেশ করা যাবে। অনেকে কল্পনা করছেন যে এই মেটাভার্স প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিজের একটি প্রতিরূপ থ্রিডি মডেল বা চরিত্র থাকবে এবং এটিই অনলাইনে তার প্রতিনিধিত্ব করবে। এটি ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারবে এবং অন্যান্য চরিত্রের সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।

অর্থাৎ এটি হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহার করে তৈরি ডিজিটাল স্থান যেখানে ডিজিটাল বিশ্বকে বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে।

মেটাভার্স কেন আলোচনায়? : ডিজিটাল পৃথিবী এবং অগমেন্টেন্ড রিয়েলিটি নিয়ে মাঝে মধ্যেই জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়। আবার কিছুদিন পর সেই আলোচনা থেমে যায়। তবে এবার প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেটাভার্স নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। এর কারণ এই প্রথমবারের মতো এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে প্রযুক্তিবিদরা মেটাভার্স প্রযুক্তি আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। ভিআর গেমিং এবং ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতির কারণেই এই ধারণা তৈরি হয়েছে। ফেসবুক যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সেই তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে মেটাভার্স প্রযুক্তি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তার প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এ কারণে ফেসবুকের নাম বদলে হয়েছে মেটা।

হাতের নাগালে আসবে কবে? : গত কয়েক বছরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছু হেডসেট তৈরি হয়েছে যা মানুষের চোখের সঙ্গে এমন চালাকি করতে পারে যে আপনি যখন ভার্চুয়াল পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবেন তখন মনে হবে সবকিছু থ্রিডিতে দেখতে পাচ্ছেন। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মেটাভার্স প্রযুক্তি তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের গতি আরও দ্রুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে ফাইভ-জি সম্প্রচার প্রযুক্তি পুরোপুরি আসার পরেই বদলে যাবে আমাদের চেনা বিশ্ব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫