ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয় না তবে ভবিষ্যতের পথ দেখায়

আসিফ
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩৩
-61c7f0842c793.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
দৈববাণীর মধ্যে আমরা যে ভবিষ্যৎ দেখতে পাই তাতেই শুধু ভুলত্রুটি থাকে না, বরং অনেক বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসেও তা ঘটে থাকে। আধুনিক পূর্বাভাসমূলক গবেষণা ক্রমশ নির্ভুল হচ্ছে। এ সমস্ত পূর্বাভাস ইঙ্গিত করছে, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি স্বপ্নময় কিছু সুযোগ তৈরি করলেও একুশ শতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। তার মধ্যে প্রাযুক্তিক আত্মধ্বংস বা বয়সন্ধিকালে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। তাই প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
ইন্টারনেটের পথিকৃৎ ইস্টার ডাইসন বলেছেন, ‘ইন্টারনেটের ডিজিটাল প্রকৃতি সরাসরি যোগাযোগে না আনতে পারলেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগীয় আদান-প্রদানে জোরালো ভূমিকা রাখছে। নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিচিও কাকু বলেছেন, আমাদের হাইটেক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন। একাবিংশ শতাব্দীতে আইগ্লাসের উদ্ভাবন ইন্টারনেটে প্রবেশ করাটা আরও সহজসাধ্য করে দিতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্মার্টফোন আমাদের অনেক দূর নিয়ে গেছে।
এমন এক ধরনের ক্রেডিট কার্ডের উদ্ভব ঘটতে যাচ্ছে যেটিতে মালিকের সম্পূর্র্ণ জেনেটিক কোড জমা করতে পারবে। এ ছাড়াও রক্তপ্রবাহে ক্ষতিকর ভাইরাসগুলোকে লেজার বীমের সহায়তায় ন্যানো আকৃতির ক্ষুদ্র রোবটরা ধ্বংস করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার কিছু অসুবিধা আছে যেগুলোর অনেক কিছুই সত্য হয় না। ধরুন প্রায় একশত বছর আগে বিংশ শতাব্দীর অগ্রগতি সম্পর্কে কল্পনাকারীরা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাদের চিন্তার অনেকক্ষেত্রই হয়তো বিরক্তিকর ছিল। যেমন- ১৮৯৩ সালে ৭৪ আমেরিকান ভবিষ্যৎ বক্তা ডাক পরিবহনের জন্য বিশ্বব্যাপী নিউমেটিক টিউব ব্যবস্থার চিন্তা করেছিলেন।
নিউমেটিক টিউব হচ্ছে এক ধরনের ক্যাপসুল পাইপ লাইন। তরলের পরিবর্তে কঠিন বস্তু চলাচল করবে। এই ব্যবস্থায় সিলিন্ডার আকৃতির ধারকের মধ্যে দিয়ে বাতাসের চাপ বা আংশিক ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি করে ডাকগুলোকে টিউব নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে। বিদ্যুৎ মিলিয়নিয়ার জর্জ ওয়েস্টিংহাউস বেশ ভালোভাবেই বুঝেছিলেন যে রেলগাড়ির ইঞ্জিন বা স্থানাস্তরে সহায়ক যন্ত্র এই পৃথিবীতে কখনো ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে চলতে পারবে না। এর মানে হচ্ছে যে কোনো পথঘাট দিয়ে তা চালানো গেলেও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কেননা এ ধরনের যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে থামানোর জন্য কোনো ব্রেক তৈরি করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, র্যান্ড করপোরেশনই প্রথমবারের মতো ভবিষ্যৎকে নিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছিল। তা অনেকাংশে সফলও হয়েছিল। ১৯৬৩ সাল থেকে আরম্ভ করে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাগুলোর পূর্বাভাসে ১৯৮৫ সালে নিউক্লিয়ার ফিউসনের ব্যবহার এবং ১৯৮৮ সালে নির্ভরযোগ্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ইঙ্গিত সঠিক না মিললেও কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। র্যান্ড করপোরেশনের পূর্বাভাসে ব্যবহৃত পদ্ধতি গবেষকরা ভবিষ্যতকে অনুমানে এখনো ব্যবহার করছেন।
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস বা ফিউচারলজির সবচেয়ে জনপ্রিয়রূপ হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের দৃশ্যাবলি পর পর সাজিয়ে ভবিষ্যতের অর্থপূর্ণ ধারাবাহিকতা তৈরি করে পূর্বাভাস দেওয়া। ভবিষ্যৎ পূর্বাভাসমূলক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে এটি একটি ফলদায়ক পথ।
এই পূর্বাভাস নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও ভবিষ্যতের ওপর আলোকপাতের মাধ্যমে বর্তমানে আমরা নিজেদের ত্রুটি বা ভ্রান্তিপূর্ণ অগ্রগতি প্রতিরোধে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। অতএব, বলা প্রয়োজন যে, পূর্বাভাসমূলক গবেষণা ভবিষ্যতের নিখুঁত ছবি সরবরাহের অভিপ্রায়ে করা হয় না, বরং বর্তমানে কি করা উচিত আর কি হওয়া উচিত নয় সেই সিদ্ধান্তের একটি খাঁটি বা গ্রহণযোগ্য ভিত্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তা করা জরুরি।