সৃষ্টিরহস্যের সন্ধানে ‘জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ’

তৌসিফ আহমেদ
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৩৯

ছবি: সংগৃহীত
মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে মানবজাতি এখনো পুরোপুরি জ্ঞাত নয়। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে নানারকম হাইপোথিসিস দিয়ে থাকলেও এখনো অনেক প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মেলেনি। আর তাই মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য সমাধানের লক্ষ্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বহুল আলোচিত ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’। এর মাধ্যমে প্রায় ১৩শ’ কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, সে সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যাবে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয়েছে যার নামে তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো চন্দ্রাভিযানের অন্যতম পথিকৃৎ। এক হাজার কোটি ডলার খরচ করে নির্মিত এই স্পেস টেলিস্কোপকে বিবেচনা করা হচ্ছে, একুশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রকল্পগুলোর একটি হিসাবে।
তিন দশকের সফল প্রচেষ্টা
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গায়ানাতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। ২৯ দিন পরে এই টেলিস্কোপ পৌঁছাবে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। ইউরোপিয়ান আরিয়েন রকেট দিয়ে এটিকে আধঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। সেখানে থেকে এটি পাঠাতে থাকবে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। যদিও এই টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণের কথা ছিল ২০০৭ সালে; কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় সে সময় সফলতা আসেনি। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৪ বছর। অবশেষে সেই স্বপ্ন রূপ নিয়েছে বাস্তবে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি হাজার কোটি ডলার খরচ করে নির্মাণ করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি যার খরচ ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ২০ কোটি ডলার, তা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১০০০ কোটি ডলারে। প্রকল্পের নকশা থেকে শুরু করে মহাকাশে প্রেরণের মাঝে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিয়ে প্রায় তিন দশক ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন বিজ্ঞানীরা।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি
বর্তমানে মহাকাশে কার্যরত হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে পাঠানো হয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। মহাকাশে ৩১ বছর কাটানো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ তার জীবনসীমার শেষপ্রান্তে চলে এসেছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ হাবলের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বড় এবং একশ’ গুণ বেশি শক্তিশালী।
নতুন এই টেলিস্কোপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটি প্রতিফলক আয়না - যা ৬.৫ মিটার চওড়া। বিশালাকৃতির এই আয়নার পেছনে সোনার প্রলেপ লাগানো রয়েছে। বিশাল আয়না এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাবেন। এর ফলে প্রথম যে তারাগুলোর আলোয় সাড়ে ১৩শ’ কোটি বছর আগেকার বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল - তার অনুসন্ধান এখন করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞানীরা বলেন- সেই সময়ে ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মত কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মতো ‘ভারী পরমাণু’গুলো গঠিত হয়েছিল, যা প্রাণ সৃষ্টির জন্য ছিল অত্যাবশ্যক। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, বহুদূরের গ্রহগুলোর পরিবেশ কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা, যার ফলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে পারবেন যে সেগুলোতে আদৌ প্রাণীর বসবাসের মতো পরিবেশ আছে কি-না।