
প্রতীকী ছবি
ধরুন, এমনটা যদি বলা হয়- আর খুব বেশি দিন বাকি নেই যে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজার দখল করে নেবে, তাহলে এটা মনে হতে পারে, একটু বেশিই সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে গেল।
কিন্তু বিষয়টা মোটেও তা নয়। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে চলছিল যে বিষয় সেটাই বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে ঘোড়ার গতি নিয়ে ছুটতে শুরু করে, এমন ঘটনা পৃথিবী অনেকবারই দেখেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির বেলাও একই কাহিনী ঘটছে।
আজকের ইন্ডাস্ট্রিতে এখন যে বিপ্লবটি ঘটছে তা মূলত বৈদ্যুতিক গাড়িরই বিপ্লব। স্টিভ জবস যখন প্রথম আইফোনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে তখন স্মার্টফোন বিপ্লব শুরু হয়েছিল। গাড়ি ইন্ডাস্ট্রিতে ঠিক একইরকম একটি বিপ্লবের আভাস দেখা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, গাড়ির জগতের আইফোন নির্মাতা হচ্ছে টেসলা। প্রয়োজনীয় পালিশ, বৈদ্যুতিকরণ, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিংয়ের পরে তারা অ্যাপল আইফোনের ব্যবসা মডেলটিকে অনুকরণ করছে।
ইন্ডাস্ট্রি যে বিদ্যুতায়নের দিকে সরে আসছে, তা ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। গত বছর গাড়ি নির্মাণের ৪০ শতাংশ খরচ ইলেকট্রনিক্সের পেছনে ব্যয় হয়েছে। এক দশক আগে যা ছিল ২৭ শতাংশ এবং ২০০০ সালে এটা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। খরচের দিক থেকে তাই এটা অনেকটা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক আইটেম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতে গাড়িচালকেরা সামনের রাস্তার তুলনায় তাদের সামনে থাকা ইন্টারনেট সংযুক্ত বিশাল স্ক্রিনের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে। কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যেই ব্যবহারকারীদেরকে স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সফটওয়্যার আপগ্রেড করার সুযোগ দিচ্ছে। আবার, অর্থের বিনিময়েও সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে গাড়ির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের আপগ্রেড কেনার সুযোগ রয়েছে। এই ট্রেন্ড ভবিষ্যতে ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে।
যারা বিশ্বব্যাপী মোটরগাড়ি শিল্পের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন- সেই পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, সেই সময় প্রায় এসে গেছে, যখন বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি খুব দ্রুতগতিতে পেট্রোল আর ডিজেলচালিত গাড়ির বিক্রিকে ছাড়িয়ে যাবে।
এসব থেকে অনুমেয়, প্রতিষ্ঠিত গাড়ি কোম্পানিগুলো অনুধাবন করতে পেরেছে যদি সময়ের সাথে তারা নিজেদের প্রযুক্তিকে বদলানোর প্রয়াশ না করে তবে নিশ্চিতভাবে বড়সড় ধাক্কা খাবে। তাই তারা বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে, স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সফটওয়্যারেও আগ্রহ দেখাচ্ছে।
যেমন, জাগুয়ার কোম্পানি পরিকল্পনা করছে ২০২৫ সাল থেকে তারা শুধু বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িই বিক্রি করবে। ব্রিটিশ স্পোর্টসকার নির্মাতা কোম্পানি লোটাস বলছে, তারা ২০২৮ সাল থেকে শুধু বৈদ্যুতিক গাড়িই বিক্রি করবে, এবং ভলভো বলছে, তারাও তাই করবে ২০৩০ সাল থেকে।
জাগুয়ার বা লোটাসের মত দামী গাড়ি নির্মাতারাই যে শুধু এটা করতে যাচ্ছে তা নয়। জেনারেল মোটরস বলছে, তারা ২০৩৫ সাল নাগাদ শুধুই বৈদ্যুতিক গাড়ি বানাবে। ফোর্ড বলছে, তারা ইউরোপে যত গাড়ি বিক্রি করে, ২০৩০ সালের মধ্যে তার সবই হবে বিদ্যুৎ-চালিত।
এর সাথে ক্রমবর্ধমান পরিবেশ সচেতনতারও একটা প্রচ্ছন্ন সম্পর্ক আছে। পৃথিবীর অনেক দেশের সরকারই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ করার। আর তাতে উৎসাহিত হচ্ছে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া।
বলা যায়, ফসিলজাত জ্বালানি-চালিত গাড়ি ধীরে ধীরে উঠে যাওয়াটা এখন এক রকম অবধারিত। আর এ বিষয়টাকে ত্বরান্বিত করছে নীরবে ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিগত বিপ্লব।