Logo
×

Follow Us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

চিনাবাদামের খোসায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১১:৪৯

 চিনাবাদামের খোসায়  তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি

পিনাট পাওয়ার ব্যাটারি। ছবি: সংগৃহীত

সারা বিশ্বে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বিপুল চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাটারির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। এদিকে প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি নিয়ে বিতর্ক কম নয়৷ এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালে এক প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ব্যাটারি তৈরির উদ্যোগ চলছে।

ডয়চে ভেলের সূত্রে জানা গেছেসেনেগালের রাজধানী ডাকারের শেখ আন্টা ডিয়প বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে বিশেষ কাঁচামাল হিসাবে চিনাবাদামের খোসা দিয়ে তৈরি হচ্ছে  ব্যাটারি।

এই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট পদার্থবিদ বালা ডিয়প এনগম বলেন, ‘‘এই ধরনের বায়োমাসকে উন্নত উপাদানে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া গবেষণার নতুন এক ক্ষেত্র। গত দুই-তিন বছর ধরে বিজ্ঞানীরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। আফ্রিকায় আমরাই প্রথম এমন কাজ করছি।”

সেনেগাল চিনাবাদামের জন্য প্রসিদ্ধ। দেশটির চারটি প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্যের একটি এটি। গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় এই খাদ্যপণ্য চাষ করে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে চলতি বছর ফসলের পরিমাণ কমে ১৬ লাখ টন হতে চলেছে। এনগমের মতে, বর্জ্য হিসেবে সেটি একেবারে খাঁটি৷

এনগমের প্রতিষ্ঠান দুই বছর ধরে ১৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে বায়োমাস জ্বালানিতে রূপান্তর করার বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছে৷ প্রথম ধাপে খোসাগুলি গুঁড়া করে পানির সাথে মেশানো হয়৷ 

বালা ডিয়প এনগম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘গোটা মিশ্রণটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এভাবে ভেজানো হয়। তবে সেটাই অন্যতম জরুরি বিষয় হওয়ায় আপনাকে সময়কাল সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারবো না। তারপর সেই মিশ্রণ ছেঁকে এই তরল পাই। আরো কিছু উপাদান যোগ করলে ব্যাটারির পজিটিভ চার্জ সৃষ্টি করতে পারি।”

গবেষকরা চিনাবাদামের খোসার মধ্যে উচ্চ মাত্রার কার্বন কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে নির্যাস হিসেবে জিংক অক্সাইড বের করে নেন। সূর্যের আলোর বিকিরণের মুখে উচ্চ তাপমাত্রায় সেই তরল থেকে জিংক অক্সাইড উবে গিয়ে ধাতব দস্তায় পরিণত হয়। সেটি শক্তি ধারণ করতে পারে।

পরিবেশবান্ধব এসব ব্যাটারির সম্ভাবনা প্রচলিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো হলেও সেটির খারাপ দিকগুলো এর মধ্যে নেই। কারণ, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মধ্যে কোবাল্টের মতো উপাদান রয়েছে। আফ্রিকার কংগোয় বিপজ্জনক খনিতে প্রায়ই শিশুদের দিয়ে সেই ধাতু উত্তোলন করা হয়।

এমন পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি সেনেগালে চালু করা সম্ভব হলে খুবই সুবিধা হবে। কারণ প্রায় ৪০% বাড়িঘর সরকারের পাওয়ার গ্রিডের সাথে যুক্ত নয়। সেখানে ব্যাটারি বা সৌরশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেকে কোনো রকম জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায় না। গ্লোবাল গ্রিন গ্রোথ ইনিশিয়েটিভের পরিবেশ বিশ্লেষক মোদু ফালের মতে, জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, সেই ঘাটতি পূরণ করতে হলে বায়োমাসের মতো জ্বালানির উৎসের আরো বিকাশের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক উন্নতির অবকাশ রয়েছে। জ্বালানি হিসেবে বায়োমাস আজকের সমস্যার সমাধান হতে পারে, কারণ চিনাবাদাম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে সেনেগালে চিনাবাদামের খোসার বিশাল জোগান রয়েছে। বিশাল পরিমাণ বায়োমাসের দৌলতে সেনেগালে কাসামঁসের মতো অঞ্চলে জ্বালানির এই উৎস বর্তমান ঘাটতি অনেকটাই কাটাতে পারবে।”

প্রাথমিক পরীক্ষায় গবেষকরা তাদের বায়ো ব্যাটারি কাজে লাগিয়ে রিমোট কন্ট্রোল বা মোবাইল ফোন চালাতে পেরেছেন। তবে তাদের পণ্য এখনো বাজারের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। 

বালা ডিয়প এনগম বলেন, ‘‘এখন আমাদের ল্যাবে সব প্রক্রিয়া আরো উন্নত করে তুলতে হবে, সব প্যারামিটার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যাতে সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করে। তারপর সেটি বাজারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।”

ডাকারের গবেষক দলের মনে তাদের ব্যাটারির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে হলে আরো গবেষণা ও আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তখনই সেনেগালের মানুষ “পিনাট পাওয়ার” ব্যাটারি সত্যি ব্যবহার করতে পারবেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫