কল্পনা করুন, এমন একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা বা এআই সিস্টেম তৈরি করলাম, যেটি বিশ্বের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেটি ব্যবহার করে প্রাক-শিল্প পর্যায়ের কার্বন ডাই-অক্সাইড মাত্রার আবহাওয়ায় ফিরে যেতে চাই। তখন হয়তো ওই এআই সিস্টেম ঠিক করল যে, কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পৃথিবী থেকে সব মানুষকে সরিয়ে ফেলা।
আবার এআইকে আরও সুনির্দিষ্ট করে কমান্ড দিলেন, তুমি যা চাও সব কিছুই করতে পারবে; শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। তখন ওই সিস্টেম কী করবে? এটি তখন হয়তো মানুষকে সন্তান কম নেওয়ার ব্যাপারে এমনভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করবে যে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে একসময় মানুষই নিঃশেষ হয়ে যাবে।
এই উদাহরণটি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টুর্ট রাসেল, যিনি আধুনিক যন্ত্র সক্ষমতা প্রযুক্তি বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক রাসেল ‘হিউম্যান কম্প্যাটিবল : এআই অ্যান্ড দি প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ নামের একটি বই লিখেছেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিপজ্জনক দিক তুলে ধরা হয়েছে।
যদিও স্টিফেন হকিং থেকে শুরু করে ইলন মাস্ক-বিশ্বের শীর্ষ কয়েকজন বিজ্ঞানী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি একসময় হয়তো মানব প্রজাতির জন্য একটি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু অধ্যাপক রাসেলের নতুন বইতে বলা হয়েছে, রোবট আসলে নিজে থেকে সচেতন হয়ে উঠছে না বা তাদের মানুষ প্রভুর বিরুদ্ধে এমন কোনো মনোভাব তৈরি করছে না, যেটি মানুষের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু আসলে এসব যন্ত্রের জন্য নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এগুলো এতটাই দক্ষ হয়ে উঠছে যে, তাদের ভুল কোনো কাজে লাগানোর মাধ্যমেই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মানুষের উচিত রোবট বা যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা।
আমরা মনে করি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা কাজ ঠিক করে দেওয়া এই সমস্যার সমাধান। কিন্তু আদৌ তা নয়। কারণ মানুষ নিজেরাই ঠিক মতো জানে না যে তারা কী চায়। অধ্যাপক রাসেল বলছেন, ‘রোবটকে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ঠিক করে দেওয়া এবং সেটি থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শিক্ষা নেওয়ার মতো ধারণা থেকে সরে আসা উচিত। বরং সিস্টেমটা এমন হওয়া উচিত যেন সেটি জানতে না পারে যে, আসলে সে কী উদ্দেশ্যে কাজ করছে। যখন আপনি এভাবে সিস্টেমটি পরিচালনা করবেন, তখন সেটি আসলে মানুষের থেকে পিছিয়ে থাকবে। তারা কোনো কিছু করার আগে প্রশ্ন করতে শুরু করবে, কারণ যন্ত্র তখন আর নিশ্চিত হতে পারবে না যে, আপনি কী চাইছেন।’
অধ্যাপক রাসেল আরও বলছেন, বিশেষ করে তখন যন্ত্রগুলো নিজেদের গুটিয়ে রাখবে, কারণ সেগুলো এমন কিছু করতে চাইবে না, যা আপনি অপছন্দ করতে পারেন। ‘হিউম্যান কম্প্যাটিবল : এআই অ্যান্ড দি প্রবলেম অব কন্ট্রোল’ বইয়ে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা যে পদ্ধতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছি সেটি অনেকটা যেন প্রদীপের ভেতরে থাকা দৈত্যের মতো। বাতি ঘষবেন, তখন দৈত্য বেরিয়ে আসবে আর আপনি বলবেন যে, আমি চাই এটা করা হোক।’
আর তখন যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যথেষ্ট ক্ষমতা থাকে, তাহলে যা করতে বলবেন, সেটা ঠিক তাই করবে। তবে প্রদীপের দৈত্যের কাছে তিনটি ইচ্ছা পূরণের সক্ষমতা ছিল। প্রথম দুটি ইচ্ছা যদি ঠিকঠাক না কাজ করে তাহলে তৃতীয় ইচ্ছা দ্বারা মুহূর্তেই সবকিছু ঠিক করে ফেলা যায়। এখন এআই সিস্টেমের সমস্যা হলো, সেখানে তৃতীয় ইচ্ছার কোনো বিষয় নেই। যদি বলেন প্রথম দুটি ইচ্ছা বাতিল করে আগের মতো করে দাও, কারণ আমরা আমাদের লক্ষ্য ভালোভাবে ঠিক করতে পারছি না। সেটি কিন্তু এআই সিস্টেম দ্বারা মানুষের জীবন বা পরিবেশে ঘটানো কার্যকরণের ফলাফল মুহূর্তেই বদলে ফেলা সম্ভব নয়।
সুতরাং তখন সেটি মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এমন হুমকি যার বাটারফ্লাই ইফেক্টে পুরো মানব সভ্যতাই হয়তো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিজ্ঞান প্রযুক্তি আবহাওয়া
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh