পায়ুপথে শ্বাস নেয়ার সক্ষমতা ও এবারের ইগ নোবেল

করোনা মহামারির সময় যখন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটরের সংকট দেখা দেয়, তখন বিকল্প উপায়ে মানবদেহে অক্সিজেন প্রবেশ করানো যায় কিনা তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী। তাদের এই গবেষণা এক অভূতপূর্ব ঘটনার জন্ম দেয়। জাপানি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন যে, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের পায়ুপথের সাহায্যেও শ্বাস নিতে সক্ষম! মূলত তারা শ্বাসযন্ত্রের রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে কিনা, তা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। প্রথমে বিজ্ঞানীরা ইঁদুর ও শূকরের পায়ুপথের মধ্য দিয়ে এদের দেহের ভেতরে অক্সিজেন প্রবেশ করান। তারা দেখতে পান, প্রাণীগুলো তাদের রক্তে সেই অক্সিজেন শোষণ করতে পারছে, যা কিনা স্বাভাবিক শ্বাসকার্যের মতোই কার্যকরী। 

এই বিরল আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে শারীরতত্ত্ব বিভাগে তারা জিতে নেন ‘ইগ নোবেল’। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এতে আসল নোবেল জয়ীরাও উপস্থিত ছিলেন। লোকজনকে একাধারে হাসায় এবং চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে, এমন আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর এই বার্ষিক পুরস্কারটি এই নিয়ে একটানা ১৮তম বছরের মতো লাভ করলেন জাপানি বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ‘সায়েন্টিফিক হিউমার ম্যাগাজিন’ ১৯৯১ সালে নোবেল পুরস্কারের প্যারোডি হিসাবে ‘ইগ নোবেল’ পুরস্কার চালু করে।

এবারের ‘ইগ নোবেল’ পেল আরও যেসব ক্যাটাগরি

কবুতরকে ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতর বসিয়ে মিলল শান্তিতে পুরস্কার : রেসিং হোমার জাতের ক্যারিয়ার কবুতর দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের দিকনির্ণয় ক্ষমতা, গতি এবং উচ্চতার কারণে, তারা প্রায়শই সামরিক বার্তা-বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এসব কবুতর প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্তা বহন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৬০ সালে প্রয়াত মার্কিন মনোবিজ্ঞানীর বিএফ স্কিনার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি কবুতর ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতরে সংযুক্ত করে একটি পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় দেখা যায় কবুতর তার দিকনির্ণয় ক্ষমতা দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। এ পদ্ধতিকে তিনি ‘ক্র্যাকপট’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও সে সময় তার এই পদ্ধতিটি ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত বছর পর তার সেই চমকপ্রদ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তিতে তাকে এবার ‘ইগ নোবেল’ শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। 

‘উদ্ভিদ দৃষ্টি’ গবেষণায় উদ্ভিদবিদ্যায় পুরস্কার : যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকব হোয়াইট ও জার্মানির ফেলিপ ইয়ামাশিতা প্রমাণ করেছেন যে দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ বোকুইলা ট্রাইফোলিওলাটা তার পাশে রাখা প্লাস্টিকের গাছের পাতা অনুকরণ করতে পারে। অর্থাৎ কোনো প্লাস্টিকের গাছ এই গাছটির পাশে রাখা হলে এর পাতাও প্লাস্টিকের গাছের পাতার মতোই হতে পারে। এ থেকে গবেষকরা এটাই পরামর্শ দেন যে ‘প্ল্যান্ট ভিশন’ বা ‘উদ্ভিদ দৃষ্টি’ বাস্তব সম্ভাবনা হতে পারে। আর এই গবেষণাই তাদেরকে এনে দিয়েছে উদ্ভিদবিদ্যায় ‘ইগ নোবেল’ পুরস্কার।

গরুর পিঠে বিড়াল বসিয়ে জীববিদ্যায় পুরস্কার : ১৯৪০ সালে প্রয়াত জীববিজ্ঞানী ফোর্ডাইস এলি ও উইলিয়াম পিটারসন গাভীর দুধ উৎপাদন নিয়ে একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। একটি গাভীর দুধ দোহনের সময় তারা গাভীটির পিঠে একটি বিড়াল বসিয়ে দিয়েছিলেন এবং পাশ থেকে প্রতি ১০ সেকেন্ড পর পর দুই মিনিট পর্যন্ত কাগজের ব্যাগ ফাটিয়ে শব্দ করছিলেন। তারা মূলত এটি দেখতে চেয়েছিলেন যে বিড়াল ও শব্দের কারণে গাভীর দুধের পরিমাণে কোনো তারতম্য হয় কিনা। তারা গবেষণাটি ‘জার্নাল অব অ্যানিম্যাল সায়েন্স’-এ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তারা লিখেছিলেন, বিড়াল ও শব্দের কারণে গাভীটি ভয় পেয়েছিল। আর ভীত গাভী কম দুধ উৎপাদন করে। এই আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর তাদের জীববিজ্ঞান বিভাগে ‘ইগ নোবেল’ পুরস্কার দেওয়া হয়। 

চুলের ঘূর্ণনে অ্যানাটমিতে পুরস্কার : চুলের ঘূর্ণন নিয়ে বৈশ্বিক গবেষণায় অ্যানাটমি বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন নেকার-মালাদেস ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ক্রেনিওফেসিয়াল সার্জন অধ্যাপক রোমান খোনসারি ও তার সহকর্মীরা। তারা দেখিয়েছেন যে উত্তর গোলার্ধে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষের মাথার ত্বকের চুল ঘড়ির কাঁটার দিকে সর্পিল হয়। আর দক্ষিণ গোলার্ধে বসবাসকারী মানুষের মাথার ত্বকের চুল ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে সর্পিল হয়।

এ ছাড়া ভুল ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ করে মেডিসিনে, সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি কয়েন টস করে সম্ভাব্যতা শাখায়, মাতাল ও শান্ত কৃমিগুলো আলাদা করার জন্য ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতি ব্যবহার করে রসায়ন শাখায়, মৃত ট্রাউট মাছও যে ভালোভাবে সাঁতার কাটতে পারে-গবেষণায় সেটা প্রমাণের জন্য পদার্থবিদ্যায় ইগ নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh