আমরা তাহলে সমান্তরাল মহাবিশ্বের বাসিন্দা?

হলিউডের বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্রে যাদের আগ্রহ- সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে তারা অবগত। ড. স্ট্রেঞ্জের এক জগত থেকে আরেক জগতে লাফিয়ে বেড়ানোকে এতদিন কল্পকাহিনী মনে হলেও আধুনিক বিজ্ঞান এখন এর অস্তিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে।

গত বছরের শেষ দিকে  প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যালফ্যাবেটের সহ প্রতিষ্ঠান গুগল তাদের নতুন কোয়ান্টাম চিপ ‘উইলো’র বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সমান্তরাল মহাবিশ্ব নিয়ে প্রযুক্তি জগতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের এই চিপ এমন গানিতিক সমস্যা ৫ মিনিটে সমাধান করেছে যা একটি সুপার কম্পিউটারের করতে ১০ সেপ্টিলিয়ন বছর লাগত। এক সেপ্টিলিয়ন এমন একটি সংখ্যা যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতের সময়ের গণনায় আগে কখনও ব্যবহার করেনি। ১ এর পেছনে ২৪টি শূন্য বসালেই কেবল এক সেপ্টিলিয়ন হয়। মহাবিশ্বের বয়সও এতো বেশি নয়।

কিন্তু এই জটিল সমস্যা কীভাবে সমাধান করল কোয়ান্টাম চিপ উইলো? যার স্পষ্ট উত্তর গুগলের কাছেও নেই। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গুগল বলেছে, তারা ধারণা করছেন, উইলো একই সঙ্গে অনেক সমান্তরাল মহাবিশ্বে প্রবেশ করে গণনা করেছে। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।

গুগলের কোয়ান্টাম চিপ উইলো 

আমরা মাল্টিভার্সে বসবাস করি- এমন ধারণা বিজ্ঞান জগতে প্রথম নিয়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের কোয়ান্টাম পদার্থবিদ ডেভিড ডয়েচ। ১৯৯৭ সালে তার প্রকাশিত ‘দ্য ফেব্রিক অব রিয়েলিটি’ নন ফিকশন বইতে কার্যত তিনি আমাদের চেনা জগতকে পুরোপুরি চ্যালেঞ্জ করেন।

ডেভিড ডয়েচ তার বইতে দাবি করেন, কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে যদি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে- একই সঙ্গে সমান্তরাল মহাবিশ্বের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। আর এই বহুজগত কেন্দ্রিক ধারণাকেই তিনি বলছেন- মাল্টিভার্স হাইপোথিসিস।

মাল্টিভার্স হাইপোথিসিস হলো্‌ এমন ধারণা, যেখানে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেই অসংখ্য মহাবিশ্ব থাকতে পারে। এর পরিধি এতই ব্যাপক যে প্রত্যেকটি মুহূর্তে নতুন নতুন জগত তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেকটি সম্ভাবনা ও শঙ্কা আলাদা আলাদা জগত তৈরি করছে।

হলিউডের পর্দায় মাল্টিভার্সে প্রবেশের কল্পিত দৃশ্য

উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলে বলা যায়, মনে করুন একজন মানুষ পদ্মা সেতু থেকে টুপ করে ফেলে দেওয়া হলো। তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও যেমন আছে, সঙ্গে আছে মৃত্যুর শঙ্কাও। এই শঙ্কা ও সম্ভাবনা দুইটি আলাদা জগত তৈরি করে ফেলছে। অর্থ্যাৎ এক সময় রেখায় তার মৃত্যু হয়েছে, স্বজনেরা শোক করছে। অন্য সময় রেখায় তিনি দিব্যি বেঁচে গেছেন। বা অন্য কোনো সময় রেখায় তাকে নদীতে টুপ করে ফেলাই হয়নি।

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের শাখা মাল্টিভার্স হাইপোথিসিস অনেক জনপ্রিয় হলেও মূলধারার বিজ্ঞানে এটিকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিল না। কারণ এটি প্রমাণিত নয়। তবে গুগলের এই দাবির প্রেক্ষিতে এখন নড়েচড়ে বসেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রেমীরা। পডকাস্টার জো রোগান তো নিজের অস্বস্তির কথা সরাসরি প্রকাশ করে বাস্তবতার অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারি- আরও মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সমান্তরাল ভাবে রয়েছে। তাদের সঙ্গে কি যোগাযোগ করা সম্ভব হবে? তার জন্য অবশ্যই আপাতত কোয়ান্টাম চিপের গবেষণার ওপরই ভরসা করতে হবে।        

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh