Logo
×

Follow Us

বাণিজ্য

রোজার আগে বোতলের সয়াবিন তেল প্রায় উধাও

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১৮:৫৩

রোজার আগে বোতলের সয়াবিন তেল প্রায় উধাও

কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকানে ক্রেতাদের ভিড়।

রেনু বেগম কারওয়ানবাজারে গিয়ে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে চক্করে পড়েছেন। একের পর এক দোকানে গিয়েও পাননি সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল, অথচ তার মাসে অন্তত একটি বোতল লাগে।

রেনু বেগম বলেন, “কোথাও পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল খুঁজে পেলাম না। বাধ্য হয়ে দুই লিটারের দুটি তেলের বোতল নিলাম। প্রতি লিটারে গুনতে হলো পাঁচ টাকা বেশি।”

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা গিয়েছে। রোজা আসার আগে আগে সেই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কারওয়াবাজারেই যেখানে তেল মিলছে না, সেখানে পাড়া মহল্লার দোকানে গিয়ে আরও বেশি হতাশ হচ্ছে মানুষ।

কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানি মোহম্মদ আল-আমিন বলেন, “দুই মাসের বেশি সময় ধরে সয়াবিন তেল চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। ডিলাররা বলছে, কোম্পানি দিতে পারছে না।

“এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল চাহিদা দিয়েও পাচ্ছি না। ডিলাররা ৫ লিটারের বোতলের বদলে ২/৩ লিটারের বোতল দিচ্ছে। এতে ক্রেতাদের প্রতি লিটারে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেশি দাম গুনতে হচ্ছে।”

শনিবার কারওয়ান বাজার, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সঙ্গে বিভিন্ন পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের বাদানুবাদ দেখা গেছে।

সুপার শপেও সংকটের ছায়া

রাজধানীর ইস্কাটনে স্বপ্ন সুপার শপে সকালে গিয়ে পাঁচ লিটারের একটি বোতল দেখা গেছে। সেখানে মূলত সূর্যমুখী তেলের বোতল সাজানো ছিল, কিন্তু এর দাম তুলনামূলক বেশি।

সয়াবিন তেলের যে বোতলটি ছিল, সেটি নিতে চাইলে ক্রেতাকে বিক্রয়কর্মী বলেন, “স্যার, একটি মাত্র বোতল নিতে পারবেন।”

সেই ক্রেতা বলেন, “একটিই তো নেব।”

এরপর সেই বোতলটি ক্রেতার হাতে দিয়ে আরেকটি বোতল সাজিয়ে রাখা হয় র‌্যাকে।

রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় স্বপ্ন সুপারশপের আরেকটি আউটলেটে কামরুল ফকির নামের এক ক্রেতাকে পাঁচ লিটারের তেলের বোতলের সঙ্গে অন্য কোনো পণ্য কিনতে বলা হয়।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলছেন, “বাজারে রমজান মাস উপলক্ষে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সয়াবিন তেলের বোতল উধাও হয়ে গেছে। এই সুযোগে নকল অস্বাস্থ্যকর তেল বাজারে বিতরণ করা হচ্ছে।”

হঠাৎ বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ কেন?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ খুঁজবেই কিন্তু সরকার সেই সুযোগ কেন দিচ্ছে তা আমি জানি না। বাণিজ্য উপদেষ্টা নিজেও একজন ব্যবসায়ী তিনি তো ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কথা ভাববেন।”

ভোজ্যতেলের এই সংকটের বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনো বক্তব্য আসেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও নেয়নি, যদিও রোজায় চাহিদার তুলনায় বেশি তেল আমদানির দাবি করা হয়েছে।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের এমন সংকট গত ডিসেম্বরেও দেখা গিয়েছিল। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাওয়ার পর সরকারের অনুমতি নিয়ে লিটারপ্রতি ৮ টাকা দাম বাড়ানো হয়। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

রোজার আগে আগে একই ধরনের সংকট দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত বোতল বাজারজাতকারী কোম্পানির তরফে দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি।

বোতলের তেল কিনতে না পেরে ক্রেতারা খোলা তেলে ঝুঁকছেন। সেই তেলের দামও বেড়ে গেছে।

রায়সাহেব বাজার ও নয়াবাজারে খোলা পামওয়েলই বিক্রি হচ্ছে লিটারে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা দরে; যদিও সরকার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম লিটারে ১৫৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে।

নয়াবাজারের বিক্রেতা আজম হোসেন দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “বোতলজাত সয়াবিন তেল তো পাওয়াই যাচ্ছে না ডিলারদের কাছে। পামওয়েল যা পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার গতমাসের তুলনায় ৫-১০ টাকা বেড়েছে লিটার প্রতি।”

তেল বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর তরফে তেল সংকট নিয়ে কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।

দাম আরও বেড়েছে যেসব পণ্যের

রোজায় চাহিদা বাড়ে, এমন বেশ কিছু পণ্যের দাম এবারও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে আলোচনার তুঙ্গে আছে লেবুর দাম।

দুই সপ্তাহ আগে লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকা। শুক্রবার থেকে থেকে সেই লেবুর হালি ৪০ থেকে ১০০ টাকায় ছুঁয়েছে।

বেগুনের দাম একইভাবে ৪০ থেকে ৬৫ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের দরের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।

কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, “সবজি সরবরাহে কোনো সমস্যা হলে এবং চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।”

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মাংসেরও। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে কারওয়ানবাজারে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়, সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গরুর মাংস ৭৫০ থেকে বেড়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নয়াবাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. জামাল বলেন, “গরুর মাংসের দাম সব সময় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ে-কমে। এটা যে রোজাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে তা বলা ঠিক হবে না।”

মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫