Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১৫:০৮

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে বিনিয়োগ করবেন

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকেই বিনিয়োগ করছেন। ফাইল ছবি

রিয়েল এস্টেট, স্টক মার্কেট, স্টার্ট-আপ বা ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বিনিয়োগের অনুকূল দিগন্ত উন্মোচন করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। মার্কিন ডলারের হার বেড়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের বিনিময় হারে। অন্যদিকে, উচ্চ মূল্যের ডলার আয়ের সঙ্গে উন্নত হয় রেমিটেন্স ক্রয় ক্ষমতা। প্রবাসীদের এই অর্থ দেশে থাকা তাদের পরিবারের জন্য যেমন সহায়ক হয়, তেমনি সম্ভাবনা তৈরি হয় দেশের বাজারে আরও বিনিয়োগের। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় বাংলাদেশ সরকারের নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশি (এনআরবি) বন্ডগুলো। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা ইউএসডিআইবি।চলুন, এই বন্ডে বিনিয়োগের পদ্ধতি সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কী

সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই এনআরবি বন্ড ইস্যু করা হয় মার্কিন ডলারে।

এটি মূলত রেমিটেন্সের বিপরীতে ফরেন কারেন্সি (এফসি) বা বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য নিবেদিত একটি সঞ্চয় প্রকল্প। অন্যান্য অধিকাংশ বন্ডের মতো এই বন্ডেও রয়েছে মুনাফা লাভ এবং সুদাসলের উপর কর-মুক্তির সুবিধা।

ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বৈশিষ্ট্য

- এই বিনিয়োগ সুবিধাটি অনিবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশে বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য

- বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে তাদের এফসি অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়

- বন্ডের মূল্য রেমিটেন্সের উপর মার্কিন ডলারে যে কোনো মূল্যের হয়ে থাকে

- বন্ডের মেয়াদ ৩ বছর

- বর্তমানে সাধারণত ৫০০, ১ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার, এবং ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের ইউএসডিআইবি ইস্যু করা হয়

ইউ.এস. ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কেনার উপায়

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

- বৈধ পাসপোর্টের অনুলিপি (বাংলাদেশে অবস্থান করলে দেশে আগমন ও প্রস্থানের সিলসহ পৃষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে)

- সম্প্রতি তোলা আবেদনকারি এবং নমিনি উভয়ের এক কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি

- ওয়ার্ক পারমিট অথবা ভিসার অনুলিপি

- তহবিলের উৎস সম্পর্কিত কাগজপত্র (চাকরির পরিচয়পত্র বা বেতন প্রাপ্তির স্লিপ)

- অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পাসপোর্টের অনুলিপি এবং আয় সংক্রান্ত নথি

- সম্পূর্ণ পূরণকৃত এবং স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদনপত্র

বন্ড ক্রয় পদ্ধতি

বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বা আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওয়েব পোর্টাল থেকে বন্ড ক্রয়ের আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করা যায়।

এছাড়া দেশে বা বিদেশে এই বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনামূল্যেই এই ফর্ম বিতরণ করে থাকে।

ফর্ম পূরনের পর ফর্ম সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি যে কোনো ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানে ইমেল করতে হবে। উপরোক্ত নথিপত্র ছাড়াও বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও কিছু দরকারি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফিরতি ইমেলে এনআরবি গ্রাহককে অবহিত করবেন।

এরপর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মসহ যাবতীয় কাগজপত্র কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তারপর আবেদনকারির বন্ডের মূল্য পরিশোধের সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বন্ড ইস্যু করবেন। পরিশেষে ক্রয়কৃত বন্ডের পরিচিতি স্বরূপ একটি অ্যাডভাইস কপি গ্রাহককে প্রেরণ করা হবে।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ইস্যু করে থাকে, সেগুলো হলো:

- বাংলাদেশ ব্যাংক

- দেশের ভেতর ও বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর এডি (অনুমোদিত ডিলার) শাখা

- প্রতিনিধি অফিস, ফরেন করেসপন্ডেন্ট

- শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর এক্সচেঞ্জ হাউস

বন্ড ক্রয়ের জন্য আবেদন পদ্ধতি

নিম্নের লিঙ্ক থেকে বন্ডে বিনিয়োগের আবেদন ফর্মটি সরাসরি ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। https://ird.gov.bd/sites/default/files/files/ird.portal.gov.bd/forms/6ef7c349_b2ef_4608_bd1d_3c7b80b2f3f6/Editable_Purchase_US_Dollar_Investment_Bond_converted.pdf

ফর্ম পূরণে যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হয়, তা হলো:

- আবেদনকারী বা বন্ড ক্রেতা এবং তার নমিনির নাম ও ঠিকানা

- নমিনির সঙ্গে আবেদনকারীর সম্পর্ক

- বন্ড ক্রেতার পাসপোর্ট নম্বর

- বন্ডের মূল্য

- এফসি অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং যেই ব্যাংকের যে শাখাতে অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, তার নাম ও ঠিকানা

- আবেদনকারীর পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান, এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম তারিখ

- বন্ড ক্রেতার চাকরির পদবি, কোম্পানির নাম

- বন্ড ক্রেতার বাংলাদেশ ও বিদেশের ঠিকানা

- সবশেষে আবেদনকারীর সই

অর্থপ্রদানের মাধ্যম

এনআরবি গ্রাহক বিদেশ থেকে তার এফসি অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে প্রেরিত অর্থ দিয়ে বন্ডের ক্রয়মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। বৈদেশিক মুদ্রায় ইএফটি (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার), চেক বা ড্রাফটের মাধ্যমে বন্ডের দাম পরিশোধ করা যাবে।

মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বন্ডে সুদের পরিমাণ

এই বন্ডের সুদের হার ৩ ধরনের বিনিয়োগের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

১ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ

এখানে সুদের হার-

- বিনিয়োগের ১ বছরের পর থেকে অনূর্ধ্ব ২ বছর পর্যন্ত ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ

- ২ বছরের পর থেকে অনূর্ধ্ব ৩ বছর পর্যন্ত ৬ শতাংশ

- ৩ বছর মেয়াদপূর্তীতে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ

১ লাখের পর থেকে ৫ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ

এই ক্যাটাগরিতে সুদের হার-

- ১ বছর পর থেকে ২ বছরের আগ পর্যন্ত ৪ শতাংশ

- ২ বছর পর থেকে ৩ বছরের আগ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ

- ৩ বছর শেষে ৫ শতাংশ

৫ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ

এখানে সুদের হার-

- ১ বছর পর থেকে অনূর্ধ্ব ২ বছর পর্যন্ত ৩ শতাংশ

- ২ বছর পর থেকে অনূর্ধ্ব ৩ বছর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ

- ৩ বছর মেয়াদপূর্তীর পর ৪ শতাংশ

এখানে উল্লেখ্য, বন্ডে বিনিয়োগের পর থেকে ১ বছরের আগেই নগদায়ন করলে কোনো সুদ পাওয়া যায় না। সরল মুনাফা পদ্ধতিতে ধার্যকৃত মুনাফা দেওয়া হয় প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর।

উদাহরণস্বরূপ, ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে ১ বছর পর থেকে প্রতি ৬ মাসে পাওয়া যাবে ৮ হাজার মার্কিন ডলার করে। দ্বিতীয় বছর পর ১৮ হাজার এবং একই ভাবে ৩ বছর পর লাভের পরিমাণ দাড়াবে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। ইউএসডিআইবি’তে বিনিয়োগের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই।

মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বন্ডের সুবিধা

- বন্ডের নমিনি বা উত্তরাধিকার বন্ডে বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর বিনিয়োগের পরিমাণের উপর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ মৃত্যু-ঝুঁকি সুবিধা পাবেন।

- বিনিয়োগকৃত পরিমাণ এবং অর্জিত সুদ ছাড়াও মৃত্যু-ঝুঁকি বাবদ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে ফেরত পাঠানো যায়।

- এই বন্ড থেকে প্রাপ্ত সুদ-আসল আয়কর-মুক্ত।

- বন্ড ক্রেতা যে কোনো সময় ইস্যুকারী অফিসকে অবহিত করে আগের নমিনিকে প্রত্যাহার করে নতুন নমিনি নিযুক্ত করতে পারেন।

- বন্ড ক্রেতা তার এনআরবি স্ট্যাটাস বজায় রাখার শর্তে মেয়াদপূর্তির পর এই বন্ডে পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবেন।

- বাংলাদেশে যে কোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে এই বন্ড মূল্যের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করা যাবে।

- মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগকৃত মূলধন এবং অর্জিত সুদের অর্থ যে কোনো সময় বিদেশে ফেরত পাঠানো যাবে।

শেষাংশ

উপযুক্ত সুদের হার ও কর রেয়াত সহ ইউ.এস. ডলার ইনভেষ্টমেন্ট বন্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগের একটি নিরাপদ উপায়। সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকায় বন্ডগুলো অন্যান্য বিনিয়োগের খাত থেকে তুলনামূলকভাবে উচ্চ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

ঋণ গ্রহণ এবং মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা এনআরবি বন্ডের উপযোগিতা আরও বাড়িয়ে তোলে। সর্বসাকূল্যে, শুধুমাত্র আর্থিক মানোন্নয়নই নয়, এই বন্ড প্রবাসীদের সুযোগ দেয় দেশের বাইরে থেকেও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫