Logo
×

Follow Us

ভ্রমণ

দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণ

Icon

ওমর শরিফ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১৯:০৯

দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণ

দার্জিলিংয়ের ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরে চা বাগানে লেখক ও তার পরিবার। ছবি: লেখক

শিলং ভ্রমণ শেষে পুলিশ বাজার থেকে নয়টা নাগাদ ট্যাক্সি চেপে রওনা হলাম গৌহাটিতে অবস্থিত লোকপ্রিয় গোপিনাথ এয়ারপোর্টের উদ্দেশে। পথে দুচোখ ভরে কুমিয়াম লেকের নজর কাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। পাহাড় বেয়ে নেমে চলেছে গাড়ি। সমতলে এসে পেলাম সুদৃশ্য হাইওয়ে। মাঝে মাঝে পাহাড় কেটে টানেল পড়ায় তা ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করল। ইচ্ছে ছিল গৌহাটিতে অবস্থিত কামাক্ষা মন্দির এক পলক দেখে তারপর এয়ারপোর্ট যাব; কিন্তু কপালে থাকা না থাকা বলে কথা। রাস্তার ট্রাফিকের কারণে প্লেন প্রায় ছাড়তে বসেছিল। এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে সব মিলিয়ে সময় নিল ৫ ঘণ্টা আর ট্যাক্সি বাবদ ৫০০০ রুপি। 

প্লেন যথাসময়ে ছেড়ে বাগডোগরা এয়ারপোর্টে পৌঁছল। সময় নিল প্রায় এক ঘণ্টা। কেউ চাইলে প্লেনে না গিয়ে ট্রেনেও যেতে পারে, তবে এতে সময় লাগবে অনেক বেশি, প্রায় ১০ ঘণ্টা। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে গেলাম দার্জিলিং। বিধিবাম-শহরে ঢোকার মুখে পড়তে হলো জ্যামে। শেষমেশ জ্যাম ঠেলে ট্যাক্সি করে সোজা উঠলাম হোটেলে।

দার্জিলিং শহর ঘোরা
সকালে খুব ভোরে ঘুম ভেঙে জানালা খুলতেই দেখা মিলল কাঞ্চনজঙ্ঘার। আহ কী অপরূপ দৃশ্য। সকালের সূর্য কিরণে স্বর্ণের মতো চক চক করছে পাহাড়ের চূড়া। এক কথায় স্বর্গীয়। রাতে ঠিক বুঝতে পারিনি। সকালে একটু ঘুরে দেখার সুযোগ হলো। যা দেখলাম আমাদের হোটেলটা গান্ধি রোডে পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত। সেখান থেকে পুরো দার্জিলিং শহরটায় দেখা যায়। থরে থরে বাড়িগুলো উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এঁকেবেঁকে সাজানো, অনেকটা সিঁড়ির মতো। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল বাড়িগুলো পড়ে গেলে? কিন্তু না, শত শত বছর ধরে এমনভাবেই এখানে বাড়ি বানায় এরা। 

প্রথম দিন চা বাগান, তিব্বত রিফুজি ক্যাম্প, চিড়িয়াখানা, মাউন্টেইন ইনস্টিটিউট, পিস প্যাগোডা দেখে মনের আশ মেটালাম। প্রায় সবগুলোতেই প্রবেশের জন্য টিকিট প্রয়োজন হবে। চা বাগানে লাগোয়া চায়ের দোকানের চা না খেলে জীবন বৃথা বলে মনে হতে পারে। অসাধারণ। চা বাগানে ঢোকার মুখে দার্জিলিংয়ের ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরে ছবি তোলার সুন্দর ব্যবস্থা আছে এখানে। যেদিকে তাকানো যাক না কেন শুধু চা বাগান আর চা বাগান। এখান থেকে গেলাম তিব্বত রিফুজি ক্যাম্প, যেখানে তিব্বত থেকে আসা শরণার্থীদের বানানো সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এখানকার কার্পেট এত আকর্ষণীয় যে আপনার শুধু কিনতে মন চাইবে। চিড়িয়াখানা ও মাউন্টেইন ইনস্টিটিউট বাচ্চাদের জন্য আদর্শ জায়গা। সেদিনের মতো ঘোরাঘুরি শেষ করে মল রোডের একটি স্থানীয় হোটেলে মোমো খেয়ে পাশে থাকা ক্লক টাওয়ার দেখে হোটেলে ফিরলাম।

রোপওয়েতে
আগে থেকেই জানা ছিল সকাল সকাল লাইনে না দাঁড়ালে রোপওয়েতে ওঠা যাবে না। দার্জিলিংয়ের অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে রোপওয়েতে ওঠা মাস্ট ডুর মধ্যে একটা। তাই দ্বিতীয় দিন পরিবার নিয়ে সকাল সকাল রওনা হলাম। রোপওয়ের লাইন দেখে আমার চোখ তো চড়কগাছ। যা-ই হোক প্রায় দুই ঘণ্টার বিনিময়ে রোপওয়েতে উঠলাম। উঠেই মনে হলো পয়সা উসুল। মেঘের ভেতর দিয়ে এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড় হয়ে যাবার সময় যে সৌন্দর্য চোখে পড়ল তা মুখে বা লিখে প্রকাশ করা অসম্ভব। 

হঠাৎ বিপত্তি
পরের গন্তব্য ঘুম স্টেশন। হিমালয় রেলের সব থেকে উঁচু স্টেশন। ১৮৮০ সালে চালু হয়ে এখনো দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। যেতে হবে টয় ট্রেনযোগে। ঘুমে পৌঁছলে সেখানে অবস্থিত মিউজিয়াম দেখতে ভোলা যাবে না। ফেরার পথে বাতাসিয়া লুপে নেমে মন ভরে ছবি তুলে তারপর শহরে ফিরলাম। শহরের একটি মলে আত্মীয়স্বজনের জন্য ছোট ছোট চায়ের প্যাকেট কিনলাম গিফট হিসেবে। আরও কিছু কেনাকাটা সারলাম। এ সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। আমি যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছিলাম সেটিতে হঠাৎ করেই গণ্ডগোল দেখা দিল। পেমেন্ট করা কঠিন হয়ে দাঁড়াল। ডলার যা নিয়েছিলাম প্রায় শেষের দিকে। ভয়ে তো আমার হার্ট ফেল করার উপক্রম। কারণ এর পরের ট্রিপ সিকিম। যদিও হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল। তবু প্রাত্যহিক খরচের একটা বিষয় তো থেকেই যায়। কী করা যায় ভাবছি। এমন সময় মেসেঞ্জারে কল করলাম বন্ধুপ্রতিম সুমন ভাইকে। উনি একটা অ্যাড্রেস দিয়ে যা টাকা লাগবে নিয়ে নিতে বললেন। সুমন ভাইয়ের সেদিনের উপকারের কথা কোনোদিন ভুলব না। দার্জিলিংয়ের জন্য দুই দিনই বরাদ্দ ছিল। আমার কাছে যা যথেষ্ট মনে হয়েছে। 

সিকিমের পথে
পরের দিন চললাম সিকিমের উদ্দেশে। আঁকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়, পাহাড়ি নদী পেরিয়ে দুপুর দুইটায় পৌঁছলাম সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে। প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা লেগে গেল সব মিলিয়ে। এখানে বলে রাখা ভালো সিকিমে প্রবেশের জন্য বর্ডারে পাসপোর্টে এন্ট্রি প্রয়োজন হয়, পাসপোর্ট সাইজের ছবিও দরকার হবে। যেহেতু আমাদের দেড় দিন থাকার প্ল্যান ছিল সে কারণে গ্যাংটক পৌঁছে, হোটেলে চেকইন সেরে চটজলদি রোপওয়ের উদ্দেশে রওনা দিলাম। রোপওয়েতে ঘুরলে পুরো গ্যাংটক দেখা হয়ে যাবে। কারণ এটি পুরোপুরি শহরের উপর দিয়ে যায়। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রাতে আড্ডা দিলাম মহাত্মা গান্ধী মার্গে। গ্যাংটক মূলত এই রোডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কী নেই এখানে? সারি সারি খাবার দোকান, কাপড়ের দোকান, বার, গিফট শপ আরও কত কী? প্রায় সব মেলে এখানে। রাতের খাওয়া সেরে রাত এগারোটার সময় হোটেলে ফিরলাম।

পরের দিন শুরু হলো গ্যাংটক শহরের আকর্ষণীয় স্থান পরিভ্রমণ। প্রথমে গেলাম বাকথাং ঝরনা দেখতে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঝরনাটি ঝিরঝির করে ঝরছে। পরে ছগায়াল পার্কে হরেক রকম ফুল দেখে চোখের শান্তি খুঁজে পেলাম। এ ছাড়া দোদ্রুল স্বর্ণ স্তুপা, নামগায় ইনস্টিটিউট দেখে বিচিত্র একটা অনুভূতি হলো। সিকিমে কড়াকড়ি থাকার কারণে শহর ছেড়ে বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না। তাই আমাদের ভ্রমণের সেখানেই ইতি টানতে হলো। কিন্তু মনের মধ্যে ভালোলাগার রেশ অনেক দিন থেকে গিয়েছিল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫