
ইলা মিত্র সংগ্রহশালা। ছবি: লেখক
ইলা মিত্র একটি ঐতিহাসিক আদর্শিক নাম। তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নারী। যার জীবন ছিল সংগ্রামময় ও ঘটনাবহুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরের জমিদার বাড়ির পুত্রবধূ হয়েও সাধারণ কৃষক-শ্রমিকদের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। তার জীবন ছিল অত্যন্ত ত্যাগের।
সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, সততা, মানবতার সংগ্রামের সঙ্গে তিনি একাত্ম হয়ে সংগ্রাম করেছেন। সাম্যবাদী আদর্শের নিঃস্বার্থ দীক্ষায় নিবেদিত হয়ে কৃষকের ঘরে কৃষাণীর জীবনযাপন করেছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন জমিদারের অত্যাচারে অভুক্ত নিরক্ষর, নিরন্ন, অসুস্থ কৃষকদের নিরক্ত জীবনযাপন। শ্রমের বিনিময়ে এক ভাগ ফসল চাষিকে দিয়ে দুই ভাগ ফসল জমিদারের গোলায় তোলা হতো। চলত আরও নানাভাবে শোষণ-বঞ্চনা।
কৃষকদের দুই ভাগ ও জমিদারের এক ভাগ ফসল পাওয়ার দাবির ন্যায্যতা বুঝে, কৃষক বিদ্রোহের ঐক্যবদ্ধ শক্তির তীব্রতা বুঝে ইলা মিত্র তেভাগা আন্দোলনে (১৯৪৬-৫০) যুক্ত হন।
এই বিদুষীর নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়া গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালাটি নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পমণ্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতলা বিশিষ্ট সংগ্রহশালাটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের ব্যালকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। যা দৃষ্টিনন্দনও বটে।
সংগ্রহশালাটির চারিদিকে সবুজ মাঠ। ছোট্ট সংগ্রহশালাটি অত্যন্ত চমৎকার। রয়েছে শৈল্পিক ও নান্দনিকতার ছাপ। ২৬ শতক জমিতে নির্মিত সংগ্রহশালা কমপ্লেক্সটি। মূল ভবনের কিছু দূরে আরেকটি গোলাকার মাটির ঘর। এটি মূলত পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। উপরে ছনের চালা দেওয়া হয়েছে। এর পাশেই শোভা পাচ্ছে ইলা মিত্রের আবক্ষ প্রতিকৃতি। এখানে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্রপত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে। নিঃসন্দেহে ওই সময়ের ইতিহাস জানতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। দর্শনার্থীদের মধ্যে তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে আগ্রহ জাগাবে।
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সংগ্রহশালাটির উদ্বোধন হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। প্রতিনিয়ত এখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। কেউ ইলা মিত্র সম্পর্কে জানতে বা গবেষণায় আগ্রহী হলে এই সংগ্রহশালা থেকে বেশ উপকৃত হবেন। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে সংগ্রহশালাটির পরিধি বিস্তার ও ইলা মিত্র সংক্রান্ত বই-পুস্তক ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ হবে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতি প্রয়োজন।
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কথা মনে হলেই সবার আগে ইলা মিত্রের নামটিই চলে আসে। সংগ্রশালাটি ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে বড় ভূমিকা রাখবে। তাকে নিয়ে অসংখ্য লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। ইতিহাসের পাতায় ইলা মিত্রের নাম থাকলেও তার স্মৃতি ধরে রাখতে এ এলাকায় তেমন কিছু ছিল না। সংগ্রহশালাটি স্থাপনের ফলে মহীয়সী নারী ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস পৌঁছে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।