
চেঙ্গী ও মাইনী নদীর অববাহিকায় পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। অরণ্যভূমি, উপত্যকা, ঝরনা-ঝিরি ও অসংখ্য পাহাড় নিয়ে পাহাড়ি এই জনপদ গড়ে উঠেছে। চেনা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আলুটিলা ও রিছাং ঝরনা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের আগমন বাড়লেও বাড়েনি পযর্টন কেন্দ্র। নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে না ওঠায় পর্যটন ক্ষেত্রে অনেকটাই কমে এসেছে জৌলুস। তবে খাগড়াছড়ির নতুন আর্কষণ হয়ে উঠছে ‘হাতি মুড়া’ বা ‘স্বর্গের সিঁড়ি’।
পাহাড়টা দেখতে অনেকটা হাতির অবয়ব হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘হাতি মুড়া’ বলেন। চাকমাদের কাছে এটি ‘এদো শিরে মোন’ এবং ত্রিপুরাদের কাছে এটি ‘মাইয়োং কপা’ নামে পরিচিত। তবে দুটোর অর্থই এক- ‘হাতির মাথা পাহাড়’। অনেকের কাছে এটি ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ বলেও পরিচিত। পর্যটকদের কাছে নতুন আর্কষণ এটি। হাতির মাথার চূড়া থেকে খাগড়াছড়ির সুউচ্চ পাহাড়ের ঢেউ চোখে পড়ে। এ ছাড়া জেলা সদরের অনেকটাই এখান থেকে দেখা যায়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তবে প্রণোদনার অভাবে আশানুরূপ পর্যটক এখানে আসছেন না। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যেগে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে হাতি মুড়া বা হাতির মাথা পাহাড় অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
খাগড়াছড়ি শহর ছেড়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই পেরাছড়া গ্রাম। নিভৃত এই পাহাড়ি পল্লী পেরিয়ে খরস্রোতা চেঙ্গী নদী। নদী পার হলে আসবে আরেক পাহাড়ি গ্রাম বানতৈসা। এখানে মূলত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। বানতৈসা গ্রাম পেরিয়ে পুরোটা পথ হাঁটতে হয়। পথে পথে জুমিয়াদের চাষাবাদ চোখে পড়ে। স্থানীয়রা সবাই মূলত কৃষিজীবী। সবুজে মোড়ানো পথে প্রায় ১ ঘণ্টার হাঁটা পথ। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে যেতে হবে হাতি মুড়া।
জানা যায়, স্থানীয়দের চলাচলের জন্য ২০১৫ সালে সিঁড়ি স্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। মূলত পাহাড়ি গ্রাম মায়ুক কপাল যাওয়ার জন্য সিঁড়িটি নির্মাণ করা হয়। খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠা নান্দনিক সিঁড়ি স্থানীয়দের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। প্রায় ২০০ সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হয়। পাহাড়ের স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পর্যটকরাও এখানে বেড়াতে আসে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আদনান আদিব জানান, ‘হাতি মুড়া বা হাতির মাথার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। খাগড়াছড়ি আসার পর এখানে ঘুরতে এসেছি। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে এখানে এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। খাগড়াছড়ি এসে হাতি মুড়া বা স্বর্গের সিঁড়ি না দেখলে ভ্রমণটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। গাইড সুবিধাসহ পর্যটক আসার জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে হাতির মাথা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।’
লংগদু থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. আরমান খান জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে খাগড়াছড়ির হাতি মুড়ার অনেক গল্প শুনেছি। হাতি মুড়া দেখার পর ভালো লেগেছে। তবে পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটকদের আগমন আরও বাড়বে।’
হাতি মুড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় এই পাহাড়ে গাছের গুঁড়ির ওপর দিয়ে বাসিন্দারা আসা-যাওয়া করত। বিকল্প পথ না থাকায় গাছের গুঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হত। এভাবে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন মারাও গেছেন। স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়।
পেরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ চাকমা জানান, ‘হাতি মুড়া পাহাড় নতুন পর্যটন এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য একটি যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাতি মুড়া যাওয়ার জন্য পর্যটকদের জন্য গাইডের ব্যবস্থা করা হবে।’