বাঁশ শিল্প আমাদের হাজার বছরের লোকজ কৃষ্টি সংস্কৃতির অন্যতম লোকগাঁথা। বাঁশ দিয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়াতে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক এক স্থান। নাম শমসের গাজী বাঁশের কেল্লা। এটি শমসের গাজী রিসোর্ট নামেও পরিচিত। বাঁশের তৈরি নান্দনিক এই রিসোর্টে রয়েছে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা। নিরব ও শান্ত শীতল পরিবেশে আধুনিক নির্মাণশৈলী দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।
ত্রিপুরার রাজা শমসের গাজীর নামেই নামকরণ করা হয় পর্যটন কেন্দ্রটির। তিনি ছিলেন বাংলার সর্বশেষ নবাব সিরাজ উদ্দৌলার সময়কার ব্যক্তি। শমসের গাজী রিসোর্ট নামের এই পর্যটন কেন্দ্রটি থাইল্যান্ড ও জাপানের বিভিন্ন শৈল্পিক রেস্ট হাউসের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এর আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন কানাডার লুই ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য প্রকৌশলী ‘সুরান না’। রিসোর্টটি গড়ে তুলেছেন ত্রিপুরার নবাব শমসের গাজীর উত্তরসূরি ওয়াদুদ ভূঞা।
২০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে বাঁশের এই রিসোর্টে আছে একই সঙ্গে পারিবারিক ঘরোয়া পরিবেশে থাকা-খাওয়ার আয়োজন। এ ছাড়াও রয়েছে পাঠ কক্ষ, মেহমান কক্ষ ও চা কর্নার। এরই মধ্যে লন, পানির ফোয়ারা, পাহাড়ি গাছপালার আবহ, পাশেই দৃষ্টিনন্দন লেক, লেকের ওপর একটি সুদৃশ্যময় পারাপার ব্রিজ, ব্রিজের পাশেই আছে ভাস্কর্য।
পাহাড়ের ওপর থেকে সাদা শাড়ি পরা এক রমণী কলসী দিয়ে জল ঢালছে, যা থেকে সৃষ্ট ঝর্ণাধারা ও রহস্যে ঘেরা ভাবনার বিষয়। আরও রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এখনকার প্রতিটি আসবাবপত্র বাঁশ দিয়ে তৈরি করা। উদ্যোক্তা প্রতিটি বিষয়কে খুব চমকপ্রদভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।
রিসোর্টের বাইরেও রয়েছে নানা শৈল্পিক আয়োজন, বাইরের বাগানের পাশের খোলা আঙ্গিনার ধারে বাঁশের মাচা করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহি পাহাড়ি ঘর। সেখানে যে কোনো সাহিত্য আড্ডা কিংবা মুক্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর পাশে ছোট ছোট ফলগাছের বাগানের মাঝে রয়েছে বসার ছোট ছোট বেঞ্চি, অপর পাশে লেকের পানিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে হাতে ঘোরানো বৈঠা দেয়া আসন পাতা সুদৃশ্যময় নৌকা। কেল্লায় ঢুকতেই সবার চোখে পড়বে ‘ঐকতান’ নামের একটি ঢোলক, তবলা, হারমোনি ও একতারা সংবলিত ভাস্কর্য।
যেথায় থাকবেন
ছুটির দিনে কয়েকশ দর্শনার্থী এই রিসোর্টে বেড়াতে আসে। আপনিও পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন নান্দনিক এই রিসোর্ট থেকে। গরমেও আরাম-আয়াশে থাকতে পারবেন। সবসময় শীতল থাকা পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট রিসোর্টের সিঙ্গেল বেড ভাড়া ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। ডাবল বেড ভাড়া ৭০০০ টাকা। তবে রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশে অনাবাসিকদের খরচ হবে মাত্র ২০ টাকা। থাকার পাশাপাশি পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে ঘরোয়া পরিবেশের ক্যান্টিন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসে বারইয়ারহাট নামতে হবে। এরপর রামগড় রোড দিয়ে করেরহাট বাজার পেরিয়ে শুভপুর বাজার। বাজার থেকে সোজা পূর্বদিকে একটি সরু সড়ক বেয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক পার হলেই দেখা যাবে বাঁশের কেল্লা।