বরাবরের মতো এ বছর নাটকের শুরুটা বেশ গতিসম্পন্ন হলেও করোনা মহামারির কারণে তাতে ভাটা পড়তে খুব একটা সময় লাগেনি। 

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় নাটকের শুটিং। দুই মাস ধরে করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আসায় নাটকের শুটিং শুরু হলেও স্পন্সরসহ বিভিন্ন ধরনের সমন্বয়ের অভাবে মুষ্টিমেয় কিছু নির্মাতা ব্যতীত বাকিদের শুটিংয়ে ফিরতে আরো সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে প্রায় তিন থেকে চার মাস পর আগের মতো না হলেও সরব হয় টিভি নাটক।

গত বছরের মতো এবারো একক টিভি নাটকে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিরোধ্য হিসেবে ধরে রেখেছিলেন অভিনেতা আফরান নিশো। পাশাপাশি অপূর্ব, জোভান, শামীম আহসান সরকার, মিশু সাব্বির প্রমুখরাও বেশ সরব ছিলেন। তাদের তুলনায় মাঝে মাঝে উপস্থিত ছিলেন তাহসানসহ অন্যরা।

অভিনেত্রীদের মধ্যে মেহজাবিন, তানজিন তিশা, সাবিলা নূরদের দখলেই ছিল অধিকাংশ নাটক। তবে এই বূহ্য ভেঙে নিজের আসন তৈরি করে নিয়েছেন তাসনিম ফারিন। তিনি নিশো অপূর্বসহ অনেকের সঙ্গেই জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন এ বছর। 

গ্রামীণ পটভূমির ওপর নির্মিত নাটকগুলোতে নিয়মিতভাবে আ খ ম হাসান, শামীম জামানরা সরব ছিলেন। পুরনো অভিনেতাদের মধ্যে জাহিদ হাসানের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতো। পাশাপাশি জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমও নাটকে নিজের ঘরানায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন। আলোচিত প্যাকেজ নাটকগুলোর মধ্যে ফজলুর রহমান বাবু অভিনীত এক্সট্রা আর্টিস্ট, আফরান নিশো- মেহজাবীন অভিনীত সানগ্লাস, তাহসান- শায়লা সাবি অভিনীত তৃতীয়জন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

নির্মাতাদের মধ্যে কাজল আরেফিন অমি, মাবরুর রশীদ বান্নাহ প্রমুখ বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন এ বছর। জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর জন্য ২০২০ সাল ছিল উল্লেখযোগ্য। কেননা তিনি নির্মাতা হিসেবে তার চারশ’তম নাটকটি নির্মাণ করেছেন এ বছরই। পাশাপাশি একই বছর সিয়াম আহমেদ ও পরীমণি অভিনীত বিশ্বসুন্দরী নামক চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তিনি নিজের নাম লিখিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতার খাতায়। 

করোনাকালে বেশ ক’মাস শুটিং বন্ধ থাকলেও ধারাবাহিক নাটকগুলোর মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তার তকমা ধরে রেখেছিল কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ব্যাচেলর পয়েন্ট। মোস্তফা কামাল রাজের নির্মিত ধারাবাহিক নাটক ফ্যামিলি ক্রাইসিসও এ বছর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল।

নাটকপাড়ায় করোনার থাবাও ছিল বেশ মর্মান্তিক। নাট্য অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অনেকেই করোনাক্রান্ত হলেও অভিনেতা অপূর্ব ও আজিজুল হাকিমের অবস্থা বেশি শঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া করোনায় পরাজিত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন বরেণ্য অভিনেতা আলী জাকের। এছাড়া ফেসবুকে হাসপাতালের ছবিসহ স্ত্রী ও নিজের করোনাক্রান্ত হওয়ার কথা জানানোর পরপরই শুটিংয়ে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব। 

বছর শেষ হতে যখন আর মাত্র কয়েক দিন বাকি, ঠিক সে মুহূর্তে নাট্যজগতের আরেকটি দুঃসংবাদ এসে হানা দেয়। আর সেটি হলো হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বদি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনকারী জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদেরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর। 

সবমিলিয়ে বলা চলে ২০২০ সালের নাট্যজগৎ ছিল আশা জাগানিয়া হতাশায় ঘেরা একটি বছর। আর এর একমাত্র নেপথ্য কারিগর হলো কভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস।