‘শুক্রবার রাতে জ্বীন আসবে, তাই দরজা খোলা রাখতে হবে’

প্রতিনিধি, বরিশাল
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৩

গ্রেপ্তারকৃত দুইজন। ছবি: সংগৃহীত
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামে হাওলাদার বাড়িতে একসঙ্গে তিনজন হত্যার চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে বরিশাল র্যাব-৮ এর সদস্যরা।
গ্রেপ্তারকৃত দুইজন হলেন- মোহাম্মদ জাকির হোসেন (৩৫) ও জুয়েল হাওলাদার (৩৪)।
‘বাড়িতে জ্বীন আসবে, তাই রাতে দরজা খোলা রাখতে হবে’, এমন প্রতারণামূলক কথা বলেই কৌশলে ঘরে প্রবেশ করেন হত্যাকরীরা। এরপর তিনজনকে হত্যার পর মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
র্যাব জানান, ৭ ডিসেম্বর শনিবার ভোররাতে বানারীপাড়ায় সলিয়াবাক পুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের বাড়িতে তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই রোমহর্ষক ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-৮ ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও র্যাব-৮ যৌথ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে জাকিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জাকির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের উত্তর রাজপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের ছেলে। তাকে ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জাকির কবিরাজি কাজে ওই বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতেও তিনি আসেন। পরে আবার চলে যান। তাই জাকিরকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বানারীপাড়া থানায় আনা হয়। পরে র্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জাকির জ্বীন হাজির ও ঝাড় ফুঁকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে বলে প্রচার করে তিনি বাড়ির সবার বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। এর সুযোগ নিয়ে তিনি ওই বাড়ির লোকজনদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, ‘শুক্রবার রাতে বাড়িতে জ্বীন আসবে, তাই রাতে দরজা খোলা রাখতে হবে’।
জাকিরের এমন প্রতারণামূলক কথাকে বিশ্বাস করে রাতে ঘর খোলা রাখেন প্রবাসী আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম (৭০)। এ সুযোগে জাকির তার সহযোগী জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাতে ওই বাড়িতে কৌশলে প্রবেশ করেন। পরে পর্যায়ক্রমে কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম (৭০), তার মেজ বোন মমতাজ বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) ও খালাত ভাই মোহাম্মদ ইউসুফকে (২২) হত্যা করেন। পরে হত্যাকারীরা ওই বাড়ি থেকে বেশকিছু মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় র্যাব-৮ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের অপর আসামি জুয়েলকে (৩৪) বরিশাল মহানগরীর কোতয়ালী থানাধীন পশ্চিম মতাশুর মুহুরী কান্দা এলাকা থেকে আটক করে। তারা দুইজনই প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
এরপর জাকির ও জুয়েলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, র্যাব-৮ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনের ভাড়া বাড়ি সাগরদীর মুন্সি বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডের পর ওই বাড়ি থেকে ছিনতাই করে আনা স্বর্ণালংকার, তিন মোবাইল ফোন ও এক চাকু উদ্ধার করে।
এদিকে, এ ঘটনায় শনিবার রাতে বানারীপাড়া থানায় অজ্ঞাত নামা আসামি করে এক দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় আটক দুইজনকে আসামি দেখিয়ে দুজনকে আটক দেখানো হয়েছে বলে জানান বানারীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) জাফর আহম্মদ।