
ঈদ মানেই যেমন খুশি, আনন্দ ও সুন্দর জমকালো জামাকাপড় পরা, ঠিক তেমনি ভোজনরসিকদের জন্য এই রোজার ঈদ অনেক আনন্দের। দীর্ঘ এক মাস ধরে টানা রোজা রাখার পর ঈদের দিন সবার জন্য হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। এই দিনে সবাই ইচ্ছেমতো খায়।
অনেকেই আছেন যারা আবার বাজি ধরে খেতে খুব ভালোবাসেন। খাবারের তালিকায় থাকে পোলাও, বিরিয়ানি, গরুর গোশতের ভুনা, মুরগির রোস্ট, খাসির রেজালা, ভারি নাস্তা ও হরেক রকমের মিষ্টিজাতীয় খাবার; কিন্তু শুধু খেলেই কি হবে?
অতিরিক্ত খেলে হয়ে যেতে পারে বদহজম এবং ওজন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে ঈদের খাবার খেতে হবে।
১. যেহেতু ঈদের সময় সবার বাড়িতে প্রচুর দাওয়াত থাকে এবং এই দাওয়াত এড়িয়ে চলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তাই অতিরিক্ত খাওয়ার পরে টক দই খেয়ে নেবেন। এতে সহজে খাবার হজম হবে। তবে করোনার কারণে হয়তো সেভাবে দাওয়াতে যাওয়া এবার সম্ভব হবে না। তবু অতিরিক্ত খাওয়ার বিষয়টা কিন্তু থেকেই যায়। বছরে একটাই তো ঈদ, ৩০ দিন সংযমের পর। তাই সেদিন যে সবাই নিয়মের বাইরে গিয়ে একটু বেশিই খাবেন, বলাই বাহুল্য। তাই হাতের কাছেই রাখুন টক দই।
২. খাওয়ার সময় কোন খাবার অতিরিক্ত খাবেন না। এক প্লেট পোলাও নিয়ে মোটামুটি সবকিছু খাবেন পরিমিতভাবে। তবে যদি লাল মাংস খাওয়া হয় তবে চর্বি কাটানোর জন্য সহনীয় কুসুম গরম লেবু পানি অথবা গ্রিন টি পান করবেন যেন চর্বি কেটে যায়।
৩. আপনার শরীরের ক্যালরি চাহিদা অনুযায়ী যেদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যাবে, সেদিন হাঁটার মাধ্যমে ও ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করবেন।
৪. যাদের ওজন অতিরিক্ত বেশি তারা খাবার খাওয়ার অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট আগে একটু পেট ভরে পানি পান করবেন। তাহলে বেশি ভারি খাবার খাওয়ার চাহিদা থাকবে না।
৫. খাবারের লিস্টে প্রতিদিন বেশি করে শাকসবজি এবং টকজাতীয় ফল খাবেন যেন দেহে অতিরিক্ত চর্বি না জমে।
৬. অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এই সময়ে কিটো ডায়েট থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে হার্টের বিপরীত হবে।
৭. যেদিন দাওয়াত থাকবে একবেলার খাবার হালকা রাখুন। তবে রাতে ভারি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
৮. যাদের দেহে কোলেস্টেরল বেশি তারা অতিরিক্ত তেল-মসলা জাতীয় খাবার এবং লাল মাংস থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন।
৯. যেহেতু এই সময়ে গরমকাল তাই বেশি করে পানি পান করুন, যেন শরীর ডি-হাইড্রেটেড না হয়ে যায়।
১০. এই সময়ে ছুটি থাকে, তাই ঘরে বসে থাকলেও অল্প জায়গায় হাঁটার অভ্যাস করুন।
১১. ভারি জাতীয় খাবার খাওয়া হচ্ছে বলেই যে সোডা জাতীয় খাবার, কার্বোনেটেড বেভারেজ ইত্যাদি খাবেন, তা কিন্তু নয়। এগুলো এড়িয়ে চলবেন।
১২. ঈদের তিন দিন পর থেকে খাবারের লিস্টে একবেলা স্যুপ, সালাদ এবং টক দই রাখবেন। এতে করে খাবার সহজে হজম হবে এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে।
উপরোক্ত নিয়মাবলি অনুসরণ করলেই আশা করি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবেন এবং আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। খাবার খাওয়ানো যার বাসায় দাওয়াত আছে তার ওপর নির্ভর করে কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য আপনি কতটুকু খাবার খাবেন তা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করবে। আশা করি সবার ঈদ অনেক আনন্দময় এবং পবিত্র হবে।
লেখক : ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ।