
প্রতিটি নতুন সকাল নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। প্রায় দু’মাসের গৃহে থাকা জীবনে যারা হাঁপিয়ে উঠেছেন, তারা আশাহত হবেন না। চাইলেই আপনি আজ থেকেও বৈচিত্র্য আনতে পারেন ঘরকোনা জীবনে। সব হতাশা, সংশয় ভুলে জীবনকে নতুন করে সাজাতে চায় সবাই, সবকিছুর পরও বেঁচে থেকে নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর গৃহবন্দি মানুষগুলো।
বাইরের আনন্দময় জীবন, ভ্রমণ, প্রিয়জনের সাক্ষাৎ সব কিছুকে ম্লান করে দিয়েছে একটি ভাইরাস, তার কাছ থেকে বাঁচতে এই বিচ্ছিন্নতা যা আমাদের শেখাচ্ছে বেঁচে থাকার নতুন মন্ত্র। নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পরিমিত আহার, ব্যায়াম, যোগাসনে মনোযোগ দিয়েছেন অনেকে; কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছেন মানসিক স্বাস্থ্যকে। এ সময়টা পুরোপুরি মানসিক চাপমুক্ত থাকা জরুরি কারণ আনন্দময় মন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দেহ মনের যৌথ সুস্থতাই মানুষকে সাফল্য এনে দেয়। এসব কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু ২৪ ঘণ্টা সবকিছুর মধ্য দিয়ে নিজেকে আনন্দে রাখা প্রতিটি মানুষের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
বেশিরভাগ মানুষ রুটিন মাফিক চলতে চায় না, তাই রুটিন করে আনন্দে থাকা সম্ভব হবে না আমাদের জন্য। সবসময় হাসি খুশি, শান্ত মনে থাকার জন্য নিজের সঙ্গে খেলতে হবে কিছু গেম। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে সাত দিন নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে, কেবল আপনার যা ভালো লাগবে তাই করবেন। আপনি যদি নিজেকে সৃজনশীল নাও মনে করেন দেখবেন নিজের অজান্তেই গান, কবিতা, ছবি আঁকার মতো কাজ করছেন। প্রতিটি মানুষের মাঝে তার শিশুসুলভ মনটি লুকিয়ে থাকে, সেই শিশুটিকে বেড়িয়ে আসতে দিন।
অনেকে ঘরে একটি রাশভারী রূপ নিয়ে থাকেন ফ্যামিলি মেইনটেইন করার নামে, সেই রূপকে বিদায় দিয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন সবার সঙ্গে। হেসে শান্তভাবে কথা বলুন, অন্যকে বুঝার চেষ্টা করুন যাতে সহজ হয়ে যাবে অনেক কিছু। বাড়ির কাজ নিজে করার চেষ্টা করুন, বাগান থাকলে সময় দিন গাছ রোপন প্রকৃতির আশ্রয় আপনাকে নতুন করে ভালোবাসতে শেখাবে। এ সময় যে কাজটিই করবেন না কেন, খুব মনোযোগ দিয়ে এবং আনন্দের সঙ্গে করবেন। তার আগে যে অটোসাজেশনটি নিজেকে দিতে হবে তা হলো ‘কোনো বিশেষ উদ্দেশে নয়, কাজটি করছি কারণ আমার ভালো লাগছে, আনন্দ পাচ্ছি তাই’।
পরের সপ্তাহে যে বিষয়টি হতে পারে আপনার দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ আরো বাড়বে, তখন আপনি একটি রুটিনে চলা শুরু করবেন ঠিকই কিন্তু আপনার মনে হবে যে, এটাই স্বাভাবিক। মানুষের সঙ্গে সংযোগ যেমন আমাদের আনন্দ দেয়, তেমনি সেই মানুষটির কটূকথা কিংবা আচরণের প্রভাব পড়ে জীবনে। বর্তমানে হতাশার অন্যতম কারণ ঘর থেকে বেড়োতে না পারার কারণে খুব বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটানো, যেখানে একেকজন মানুষের দর্শন একেক রকম এবং তা সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াসও কম নয়।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে আপনার স্মার্ট ফোনটিই আপনাকে সহযোগিতা করবে। ফানি ভিডিও, রিলাক্সিন মিউজিক, মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম ভেষজ চা পান এমনকি সেলফি তোলা তৎক্ষণাৎ আপনার মনকে চাঙা করতে পারে। সবসময় আনন্দে থাকতে হলে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে নিয়মিত বই পড়ার। পছন্দের লেখকের ছোট গল্প পড়ে কিংবা সফল মানুষের জীবনী পড়ে অভ্যাস গড়া যেতে পারে। ইন্টারনেটে নয়, বই পড়তে হবে ছাত্রের মতো মনোযোগ দিয়ে।
গান শুনে গাইতে হবে গুনগুনিয়ে। নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিয়ে পজেটিভ চিন্তা করতে হবে, আশাহত হওয়া যাবে না। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য নিজের করা ভালো কাজগুলোকে স্মরণ করতে হবে। আস্থা রাখতে হবে সামনে আরও ভালো করবেন। প্রার্থনা, মনোসংযোগ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালো কাজ, নৈতিক জীবনযাপন মানুষের জীবনে আনন্দের ধারা বয়ে দেয়। মানসিক সকল চাপকে স্মার্টভাবে মোকাবেলা করতে পারলেই জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর। আতঙ্কে সময় পার না করে, আগামী দিনের কাজের পরিকল্পনায় ব্যস্ত রাখতে হবে নিজেকে।