শরীরচর্চায় খাবারদাবার

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। তবে তা হতে হবে নিয়ম মেনে। ব্যায়ামের আগে ও পরে খাদ্য গ্রহণেও হতে হয় হিসেবি। কেননা পরিশ্রমের সঙ্গে খাবারের সঠিক সমন্বয় না হলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। ফলে ব্যায়াম ও সময় উভয়ই বৃথা যেতে পারে।

শরীরচর্চার আগে ও পরে খাবার খাওয়ায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ আছে : 

খালি পেটে ব্যায়াম করা মোটেও উচিত নয়। এমন কিছু খেয়ে নিতে হবে, যা তাৎক্ষণিক পুষ্টি জোগায়। ব্যায়ামের সময় শরীরে যে চাপ পড়ে, তাতে শর্করার পরিমাণ খুব দ্রুত কমে যায়। ফলে হাইপোগ্লেসিমিয়ার প্রকোপে অবসন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করার আধঘণ্টা আগে হালকা খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো। ফল, টোস্ট অথবা কর্নফ্লেক্সও খাওয়া যেতে পারে। ভারী খাবার খেয়ে ব্যায়াম করাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করা ভালো। ব্যায়ামের শুরুতে এক গ্লাস পানি পান করলে শরীরের আর্দ্রতা নিশ্চিত হবে।

ব্যায়ামের আগে খাওয়া যেতে পারে কলা, সেদ্ধ ডিম, মধু, যব, ব্রাউন ব্রেড, দই, ফলের সালাদ বা স্মুদি। নিমেষে পুষ্টি জোগাতে কলার জুড়ি নেই। ব্যায়াম শুরুর ৩০ মিনিট আগে এ ফল খাওয়া ভালো। উপাদেয় হতে পারে যবও। এটি ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেবে। ব্রাউন ব্রেডও উপাদেয়। এটি শকর্রা বাড়ায়। ব্যায়ামের সময় প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। সেই চাহিদা মিটতে পারে ডিম, মধু কিংবা দই খেলে।

ব্যায়ামের আগের চেয়ে পরের খাবারে গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি। শারীরিক পরিশ্রম শেষ করেই ভারী খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। আধা ঘণ্টা পর হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এ সময় জরুরি। কেননা ব্যায়াম শেষ করার আধঘণ্টার মধ্যেই পেশিতে আমিষের প্রয়োজন হয়। ব্যায়ামের সময় পেশিতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ব্যয় হয়। সাঁতার কাটলে, দৌড়ালে বা সাইকেল চালালে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি দেখা দেয়। সবচেয়ে ভালো হবে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার মিলিয়ে খেলে। এজন্য কলা ও আপেল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে খাওয়া যায়। 

ব্যায়ামের ৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। তাই ফলের রস ও পানি পান করা যেতে পারে। এতে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকবে। কর্মক্ষমতা ফিরে আসবে। প্রোটিন হজম করা কিছুটা কঠিন। তাই এর পাশাপাশি আঁশজাতীয় খাবার ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া ভালো। তবে আধা ঘণ্টার মধ্যেই খাওয়া জরুরি।

ব্যায়াম-পরবর্তী সময়কে ‘উইনডো পিরিয়ড’ বলে। তখন শরীরে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতিরোধ করতে চাইলে আধা ঘণ্টার মধ্যেই কিছু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত কিছু খাদ্য হতে পারে ওটস, স্যুপ, প্যানকেক, পুডিং, কিনওয়া, বাজরা, দুধ, ছানা, দই, চকলেট, পিনাট বাটার, অ্যাভোকাডো, বাদাম ও ফ্ল্যাক্সসিড।

অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তৃষ্ণা দূর করতে কোমল পানীয় কিংবা এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ মোটেও উচিত হবে না। চিনি ছাড়া আইস চা পান করা যেতে পারে। লবণও চিনির মতো অস্বাস্থ্যকর। ব্যায়ামের পর ঘামের সঙ্গে প্রচুর সোডিয়াম ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। ঘাটতি পূরণ করতে অনেকেই বাড়তি লবণযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন। তা এড়িয়ে স্বাভাবিক খাবার খেলেই ভালো হবে। বাদ দিতে হবে ফ্যাটযুক্ত খাবারও। ফাস্ট ফুড ও তেলে ভাজা খাবার এড়ানোই ভালো। তা না করলে ব্যায়াম কোনো কাজে লাগবে না। এতে ওজন কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //