
নারীর খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চায় ভিন্নতা থাকা দরকার। ছবি: সংগৃহীত
সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা করাকে জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দেখেন। যদিও সঠিক শরীরচর্চা ও খাবার নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এমনকি নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন ভিন্ন হলেও খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চায় যে ভিন্নতা থাকা দরকার তা ২০২৪ সালে এসেও সেভাবে আমলে নেওয়া হয়নি।
নারীর শারীরিক গঠন পুরুষের চেয়ে বেশ জটিল। জীবনের প্রতিটি স্তরে নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার বিশেষ যত্ন নেওয়া আবশ্যক। বয়সের বিভিন্ন স্তরে নারীর স্বাস্থ্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চিকিৎসা গবেষকরা একচেটিয়াভাবে পুরুষদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, নারী-পুরুষের শারীরিক গঠনের পার্থক্যকে উপেক্ষা করেছেন। এ ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র একটি ভালো উদাহরণ। ২০০৭ সালে জানা যায়, পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্ট অ্যাটাকের কারণে মারা যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ। সেই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ স্টাডি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণের পার্থক্যের জন্য পুরুষ ও নারীর জন্য পৃথক গবেষণায় সুপারিশ করা হয়। অথচ নারী স্বাস্থ্যের প্রতিবেদনে ২০২২ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে, চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণায় বিশ্বব্যাপী নারী ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।
নারীকেন্দ্রিক গবেষণার অভাবই নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মুঙ্গানুই এলাকার ফিজিওলজিস্ট ও পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. স্টেসিস সিমস তার গোটা কর্মজীবনই নারীর খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়েছেন। তার মতে, ঐতিহাসিকভাবে যখন চিন্তা করেন কে বিজ্ঞান ও গবেষণার বিকাশ ঘটিয়েছে, তখন শুরুতেই নারীদের এর বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়। নারীদের পুরুষের চেয়ে কম শক্তিশালী, কম বুদ্ধিমান, সর্বক্ষেত্রে ছোট হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। একটা সময় এমনও বলা হতো যে, ‘নারীর মস্তিষ্ক ছোট।’ নারীদের গবেষণার বাইরে রাখা হবে, এটাই স্বাভাবিক।
ড. স্টেসিস সিমসের গবেষণা থেকে
নারীকে পুরুষের মতো ব্যায়াম করার দরকার নেই। যা করতে হবে তা হলো উচ্চ-তীব্রতা বা হাই ইন্টেনসিটির শরীরচর্চা, প্রতি ৩০ সেকেন্ড বা এক মিনিটের ব্যবধানে। এটি নারীর বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে, পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-এটি অন্ত্র ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। তাই যখন উচ্চ-তীব্রতা, মাঝারি-তীব্রতা ও কম-তীব্রতার ওয়ার্কআউট নিয়ে গবেষণা করি, তখন আমাদের সত্যিই সেই উচ্চ-তীব্রতার শরীরচর্চার জন্য জোর দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে প্রতিরোধের প্রশিক্ষণও জরুরি।
প্রোটিন বা আমিষ গ্রহণের বিষয়ে একটি বড় বিতর্ক রয়েছে। নারীর জন্য প্রস্তাবিত দৈনিক আমিষ গ্রহণের মাত্রা কম। আমিষ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা শরীরচর্চা ও আমিষ গ্রহণের জন্য আরও অ্যানাবোলিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, এর মানে হলো, তাদের শরীর পেশি গঠনের ক্ষেত্রে শরীরচর্চা ও আমিষ গ্রহণে তেমন সাড়া দেয় না। তাই পেশি গঠনে আমিষ সংশ্লেষণের জন্য আরও বেশি আমিষ গ্রহণ, শরীরচর্চার ধাপ বাড়ানো এবং উচ্চ মাত্রার প্রতিরোধী প্রশিক্ষণে বেশি সময় দিতে হবে।
সাধারণভাবে নারীদের প্রতিদিন শরীরের ওজনের পাউন্ডপ্রতি ১ থেকে ১.১ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা উচিত। যদি কঠোর শরীরচর্চা করেন, তাহলে ওয়ার্কআউটের আগে ১৫ গ্রাম আমিষ এবং পরে ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হবে, যা শক্তি এবং ক্ষতিপূরণ সহজতর করতে সহায়তা করে। হৃদযন্ত্রের সক্ষমতার জন্য ওয়ার্কআউটের আগে আমিষের সঙ্গে ৩০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করতে হবে। শর্করা রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ নারীর শরীর থেকে দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যায়। ওয়ার্কআউটের পর শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ৩০, ৩৫ বা ৪০ গ্রাম আমিষ দরকার। মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীদের শরীরে আমিষের চাহিদা থাকে বেশি।