Logo
×

Follow Us

দক্ষিণ এশিয়া

বহু প্রশ্ন রেখেই আজ লোকসভায় উঠছে ভারতের নাগরিকত্ব বিল

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১৯

বহু প্রশ্ন রেখেই আজ লোকসভায় উঠছে ভারতের নাগরিকত্ব বিল

ভারতের সরকার বিরোধীদের আপত্তি ও উত্তর-পূর্বে ব্যাপক বিক্ষোভকে উপেক্ষা করেই লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 

অনেকেই বলছেন এটি আসলে অবৈধ অভিবাসন বন্ধের লক্ষ্যে কয়েক দশকের পুরনো চুক্তি বাতিল করার একটি পদক্ষেপ। 

অমিত শাহ আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ছয় দশকের পুরনো নাগরিকত্ব আইনটি সংশোধন করার জন্য এই বিলের প্রবর্তন করবেন, এরপরে এই বিলটি নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হবে এবং বিলটি পাশ করানোর জন্যে বিবেচিত হবে। 

এই বিল থেকে হওয়া আইনের মাধ্যমে পাকিস্তান, বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমরা ভারতে পাঁচ বছর বাস করলেই ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। 

কিন্তু তারা কোন দেশের নাগরিক ছিলেন বলে দাবি করবেন? বিশেষত যাদের জন্ম এ দেশে, তারা নিজেদের অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে তুলে ধরবেন কী করে? এই প্রশ্নই তুলছেন নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।

এই বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার বনধ পালনের ঘোষণা করেছে। তারা মনে করছে যে, এই বিলটি আসলে ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তি ছিন্ন করার প্রয়াস। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত অবৈধ অভিবাসীরা এ দেশে শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। আসামে ছাত্র সংগঠনগুলো হুমকি দিয়েছে, বিলটি পাস হলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করবে তারা।

১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনটিতে বলা হয়েছে, অন্য দেশে থেকে এ দেশে আসা কোনো ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকত্ব প্রার্থী হন তাহলে তাকে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এ দেশে বসবাস করছেন এই প্রমাণ দেখাতে হবে। কিন্তু সেই বিধান বদলাতেই আনা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে যে এ দেশে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যে অবেদন করতে পারবেন।

এদিসে আসামের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) থেকে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ার প্রভাব এসে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও। তাই আজ লোকসভায় পেশ হতে চলা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে উৎকণ্ঠায় এখানকার মানুষদের একটা বড় অংশ। বিলটি বিজেপি আনলেও তার বিরোধিতা করছে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামেরা। 

সারা ভারত নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের নেতা মুকুল বৈরাগ্যের বক্তব্য, আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব মিলবে। কিন্তু আইনটি সংশোধনের পর কী শর্ত চাপানো হয়, তা নিয়েই আশঙ্কা থাকছেই। নাগরিকত্ব দেবে কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের নির্ধারিত সংস্থা। তবে সেখানেও নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে যে কিছু শর্ত থাকবে, সে কথা বলা হয়েছে বিলে। সে ক্ষেত্রে কি নিজেদের বাংলাদেশি বা পাকিস্তানের নাগরিক বলতে হবে? একদিন যারা উদ্বাস্তু হয়ে এসেছিল, সেই পরিবারগুলোর বর্তমান সদস্যদের বেশিরভাগেরই জন্ম ভারতে। তারা কী করে নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করবেন?

বিলটির বিরোধিতা করছে উদ্বাস্তুদের সংগঠন ইউসিআরসি’ও। সংগঠনের নেতা মধু বাগ বলেন, এক দেশ এক নীতির কথা বলছে বিজেপি। তাহলে ২০১৫ সালের যে সময়ে বাংলাদেশে থাকা ভারতের ছিটমহলগুলোকে বৈধতা দেয়া হল, তাকে কেন মাপকাঠি ধরা হচ্ছে না? বিল পেশ হলে বিষয়গুলি স্পষ্ট হবে। ধর্মীয় কারণে উৎখাত হওয়া প্রমাণ করাও তো কঠিন কাজ। 

বিলে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত না করা তাদের প্রতি বঞ্চনা ও তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার চেষ্টা বলে মনে করছে মুসলিম সংগঠনগুলো। বিলের বিরোধিতায় ইতোমধ্যেই পথে নেমেছে তারা। এ রাজ্যের ১০ কোটি বাসিন্দার প্রায় তিন কোটিই মুসলিম। তাছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তী বাংলাদেশ থেকে আসা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যাও অন্তত ৭০ লাখ।

বিজেপির যুক্তি, প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্র পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে গ্রহণ করেছে। তাই ধর্মীয় কারণে উৎখাত হওয়া সংখ্যালঘুদের ভারতে স্থায়ী ও নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেয়া হবে। অন্য দিকে কংগ্রেস, তৃণমূল, বামেদের বিরোধিতার মূল কারণ- ধর্মীয় নিরিখে ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কী ভাবে নাগরিকত্ব দেয়া সম্ভব? এত দিন যারা এ দেশে বসবাস করছেন, তারা কি দেশের বৈধ নাগরিক নন?

২০১৬ মালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনে লোকসভায় একটি সংশোধনী বিল পাশ করালেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা রাজ্যসভায় পেশ করেনি বিজেপি। পরিবর্তে বিলটিকে পাঠানো হয়েছিল পার্লামেন্টের সিলেক্ট কমিটিতে। এবারের পরিস্থিতি অবশ্য আলাদা।

নাগরিকত্বের প্রশ্নটি বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ দেশভাগের কষ্ট এই রাজ্যগুলোকেই সরাসরি প্রভাবিত করেছিল। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যতবারই বলেছেন, সারা দেশে এনআরসি হবে, ততই যেন আতঙ্ক গ্রাস করেছে এ রাজ্যে বসবাসকারী এক সময়ের উদ্বাস্তু পরিবারগুলোকে। সম্প্রতি রাজ্যের তিন উপনির্বাচনে সেই আতঙ্কের জেরেই বিজেপির ফল খারাপ হয়েছে বলে স্বীকার করছেন দলীয় নেতৃত্ব। -এনডিটিভি ও এই সময়

আরো পড়ুন:

পাঁচ বছর হলেই ভারতের নাগরিকত্ব পাবে অমুসলিম শরণার্থীরা

ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫