মধ্যরাতে লোকসভায় পাস বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:০৩

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
বিরোধীদের প্রবল আপত্তি অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র সংখ্যার জোরে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করিয়ে নিলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার।
সারা দিন ধরে আলোচনার পরে গতকাল সোমবার (৯ বিসেম্বর) রাত ১২টা নাগাদ বিলের ওপরে ভোটাভুটি হয়। বিলের পক্ষে ৩১১টি ভোট আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৮০ জন এমপি। এই ফলাফল ঘোষণা করেন স্পিকার ওম বিড়লা। এরপরে আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা পর্যন্ত সভার কাজ মুলতুবি করে দেন তিনি।
এদিকে লোকসভায় বিল গৃহীত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
নিয়ম অনুসারে এবার বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হবে। ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের ২৪৫ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ১২৩ জনের সমর্থন যোগাড় করতে হবে মোদি সরকারকে। কিন্তু এখানে এনডিএ সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে বিতর্কিত এই বিল পাস করাতে গেলে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলোর সমর্থন প্রয়োজন সরকারের। অন্যদিকে এখানে সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিরোধী দলগুলো একযোগে চেষ্টা চালাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তুমুল হইচইয়ের মধ্যে সোমবার সকালে লোকসভায় আলোচনার জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলের একাধিক অংশ নিয়ে আপত্তি তোলে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা।
সাত ঘণ্টা বিতর্কের শেষে অমিত শাহ বলেন, ওই বিল পাস হওয়ার ফলে প্রতিবেশী তিন দেশের অমুসলিম সংখ্যালঘু শরণার্থীরা দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু ওই আইনের সঙ্গে এ দেশের মুসলিমদের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই আইন পাস হলে দেশের মুসলিম সমাজের কোনো সমস্যা হবে না।
ওই বিল নিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করার সময়েই শাহ আরো জানিয়ে দেন, খুব দ্রুত পুরো ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) আনা হবে।
বিল নিয়ে আলোচনা যত গড়িয়েছে কেউ অমিতের সঙ্গে তুলনা করছেন জার্মানির নাৎসি প্রধানের। কারও প্রশ্ন, বেছে বেছে কেন মুসলিমরাই বাদ? আপনি তো শুধু সংখ্যালঘুদেরই নিশানা করছেন? সংবিধান শিকেয় তুলে দিয়েছেন।
বিলটি পেশের পরই শুরু হয় আলোচনা। কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, 'এই বিলটি সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী।' যদিও জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ধর্মের বিভাজন করে এই বিল আনা হয়নি। এই বিল দেশের ০.০০১ শতাংশ সংখ্যালঘুরও বিরুদ্ধে নয়। বিরোধীরা বিলের কথা বিকৃত করছে। বিলে কোথাও মুসলিমদের নামটুকুও করা হয়নি। উল্টে তিন প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের কাহিনি সামনে তুলে আনেন তিনি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে আক্রমণের ছলেই আমিত শাহ স্বীকার করে নেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজন হয়েছে। সেই কারণে এখন ধর্মের ভিত্তিতে সেই বিভাজনের রাজনীতি করতে হচ্ছে তাদের।
এই বিলের পিছনে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনে নিয়ে কংগ্রেসের দেশ ভাগে রাজি হওয়াকেই দায়ী করে তিনি বলেন, ১৯৫০ সালের নেহরু-লিয়াকত চুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হত, তা হলে ওই বিল আনার প্রয়োজন হতো না।
এদিকে বিল পাসের ঘটনায় স্বভাবতই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মোদি। এদিন রাতেই এক বিবৃতিতে বিল পাসের ঘটনায় নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'দীর্ঘ সমৃদ্ধ বিতর্কের পরে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় আমি উচ্ছ্বসিত। এই বিলে সমর্থনকারী এমপি ও দলগুলোকে আমার ধন্যবাদ। মানবিক মূল্যবোধ ও আত্তীকরণের এক দীর্ঘ পরম্পরা ভারত বহন করে। সেই ঐতিহ্যের পথ ধরেই এই বিল।'- এই সময় ও আনন্দবাজার পত্রিকা
বহু প্রশ্ন রেখেই আজ লোকসভায় উঠছে ভারতের নাগরিকত্ব বিল
পাঁচ বছর হলেই ভারতের নাগরিকত্ব পাবে অমুসলিম শরণার্থীরা