
চল্লিশের কোঠায় যাদের বয়স, তারা যত সহজে ওজন ঝরিয়ে ফেলতে পারেন, পঞ্চাশের পর সেটা যথেষ্ট মুশকিল হয়ে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
অতিরিক্ত ওজন কারও কাম্য নয়। তবে বর্তমানে জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষত চল্লিশোর্ধ্ব বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে এবং শরীরে অযাচিত মেদ এবং চর্বির ভাঁজগুলো ফুটে ওঠে। একইভাবে পঞ্চাশ ও ষাটোর্ধ্ব মানুষের ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা আরও বেশি। এই বয়সে এসে ওজন কমানোর আশা প্রায় ছেড়েই দেয় মানুষ। চল্লিশের কোঠায় যাদের বয়স, তারা যত সহজে ওজন ঝরিয়ে ফেলতে পারেন, পঞ্চাশের পর সেটা যথেষ্ট মুশকিল হয়ে যেতে পারে। কারণ খুব বেশি মাত্রায় পরিশ্রম করে ওজন ঝরিয়ে ফেলা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার এমন ব্যায়াম করাও যায় না, যা হাড়ের ওপর চাপ ফেলে।
চল্লিশ, পঞ্চাশ বা ষাটের পর জীবনধারা, বিপাকীয় পরিবর্তন এবং দুর্বল খাদ্যাভ্যাস ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। তবে জেনে রাখা ভালো- এসব বয়সে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। তবে চাইলেই কি ওজন ঝরানো যায়? তাই নিয়েই আজকের আলোচনা।
চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে ওজন ঝরাবেন যেভাবে
১. তিন ধরনের ব্যায়াম প্রতিদিনের শরীরচর্চার রুটিনে রাখতে হবে, তবেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন, মাসলের টোনিং হবে এবং ভেতর থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাই কার্ডিওর পাশাপাশি ওয়েট ট্রেনিং আর স্ট্রেচিংও করতে হবে নিয়ম করে।
২. দিনের বেলা অপরিমিত চা-কফি বা চিনিমিশ্রিত শরবত, প্যাকেটজাত পানীয়, নরম পানীয় খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
৩. তাজা শাকসবজি-ফলমূল খাওয়ার ওপর জোর দিন। ময়দা, সাদা ভাতের বদলে লাল চালের ভাত, ভুষিসমেত আটা, রোলড ওটসের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট রাখুন খাদ্যতালিকায়।
৪. রান্নায় তেল-মশলার পরিমাণ কমান, ভাজাভুজি বা মিষ্টিও চলবে না। তবে ডায়েটিশিয়ান অনুমতি দিলে শুকনো ফল ও বাদাম খেতে পারেন।
৫. খাদ্যে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ান। তাতে হজমপ্রক্রিয়ার গতি বাড়ে। খাবার ভালো হলে মেদ কম জমে শরীরে; ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে।
৬. গ্রিন টি বিপাকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে এবং এটি প্রাকৃতিক ফ্যাট বার্নারের কাজ করে। এ ছাড়াও এটি দেহের আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই সাধারণ চা না খেয়ে গ্রিন টি খান।
৭. অনেক সময় কাজ আর সংসারের চাপে নিয়মিত ব্যায়াম করার সময় না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটুন।
পঞ্চাশ ও ষাটোর্ধ্ব বয়সে ওজন ঝরাবেন যেভাবে
১. যোগব্যায়াম এই বয়সের জন্য সুস্থ থাকার সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। খুব বেশি পরিশ্রম না করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এই ব্যায়াম পদ্ধতিটি। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে রাতের ঘুমেও সমস্যা হয় না, হজমপ্রক্রিয়াও থাকে সচল।
২. একটা বয়সের পর হঠাৎ দৌড়ালে হাড়ের সংযোগস্থলে চাপ পড়তে পারে। চোট পাওয়া বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তার তুলনায় হাঁটা নিরাপদ। এই বয়সে হাঁটাই সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। প্রত্যেক দিন আধাঘণ্টা হাঁটলেই অনেকটা ওজন হ্রাস হতে পারে।
৩. যারা ভাত জাতীয় খাবার পছন্দ করেন তারা মনে করেন, ভাত খেয়ে ওজন কমানো যায় না। কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। পরিমিত পরিমাণ ভাত ওজন কমাতে বেশ সহায়ক। তার সঙ্গে মাঝারি এক টুকরো মাছ বা মাংস খেতে পারেন। এটি শরীরের আমিষের চাহিদা পূরণ করবে।
৪. কম তেলে বা তেলবিহীন সবজি চর্বি অনেকাংশে কমায়। এ বয়সে তাই ১ কাপ পরিমাণ সবজি ও ডাল অবশ্যই ডায়েট চার্টে রাখা উচিত; সঙ্গে ১ কাপ টকদই- এটা খাবার হজমে সাহায্য করবে।
৫. সবশেষে চিনি ও অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।